List of Best Hotels in Bangladesh
ভারতের “মুক্তোর শহর” বলা হয় হায়দ্রাবাদকে। ৪০০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত হায়দ্রাবাদেই উৎপত্তি পৃথিবী বিখ্যাত কোহিনূর হীরার। একসময় হায়দ্রাবাদের হীরের খনিটিই ছিলো বিশ্বের একমাত্র হীরার খনি। কুতুব শাহ ও পরবর্তীতে নিজাম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল হায়দ্রাবাদ ছিলো ব্রিটিশ ভারতের একমাত্র স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল যা প্রতি মুহূর্তে এর শাসকদের গৌরব ও প্রাচুর্যের কথা জানান দেয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে হায়দ্রাবাদ একটি মেট্রোপলিটন শহর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এর গরিমা হারিয়ে যায় নি এখনো। হায়দ্রাবাদের অলিতে গলিতে হাটলে ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললেই আপনি বুঝতে পারবেন এখানকার মানুষ এখনো তাদের ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। আর রাখবে না ই বা কেন? এমন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আর কয়টা শহরের আছে?
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো আপনার হায়দ্রাবাদ ভ্রমণে দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি, কিভাবে হায়দ্রাবাদ যাবেন, হায়দ্রাবাদ গিয়ে কোথায় থাকবেন, সব মিলিয়ে খরচ কেমন পড়বে, ইত্যাদি।
তো চলুন শুরু করা যাক।
সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার জন্য হায়দ্রাবাদের দর্শনীয় স্থানগুলো নিম্নরুপঃ
হায়দ্রাবাদিদের কাছে চারমিনার আর হায়দ্রাবাদ যেন সমার্থক শব্দ। হায়দ্রাবাদ শহরটি গড়ে উঠেছে ৪৮ মিটার উঁচু চারমিনারকে কেন্দ্র করে। আর এই চারমিনার তৈরি হয়েছিলো ১৫৯১ সালে, কুতুব শাহ সাম্রাজ্যের সময়ে। তৎকালীন সময়ে পুরো হায়দ্রাবাদের একমাত্র একাধিক তলা বিশিষ্ট ইমারত ছিলো চারমিনার। কুতুব শাহ সাম্রাজ্যের সুলতানেরা ছিলেন শিয়া মুসলিম। তাই চারমিনারের দেয়ালে খচিত রয়েছে “শিয়া তাজিয়া” দের নানাবিধ ফলক ও চিহ্ন। চারমিনারের ভেতর ৪৫টি নামাজের কক্ষ রয়েছে যেখানে আজও নামাজ আদায় করা হয়।
টিপসঃ
চারমিনারের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ ভারতীয় রুপি।
খোলার সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫.৩০।
চারমিনার প্রতিদিন খোলা থাকে।
কুতুব শাহ সাম্রাজ্যের সুলতানদের বাসস্থান ছিলো বিখ্যাত হীরের খনি “কল্লুর মাইন” এর কাছে পাহাড়ের চুড়োয় গোলকোন্ডা দুর্গ। গোলকোন্ডা দুর্গের স্থাপত্য়শিল্প আজকের দিনে এসেও যেকোন দর্শনার্থীকে চমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। গোলকোন্ডা দুর্গ একটি নয় বরং অনেকগুলো আলাদা আলাদা ইমারত নিয়ে গঠিত। এক একটি বিল্ডিং এর দূরত্ব এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে প্রতিধ্বনির মাধ্যমে দুর্গগুলোর মধ্যে শব্দ চলাচল করতে পারে।
স্থাপত্যবিদ্যা ও ধ্বনিবিদ্যার অপূর্ব মিশেলে তৈরি গোলকোন্ডা দুর্গ এমনভাবে বানানো হয়েছে যেন শত্রু আক্রমণ করতে এলে দুর্গের ভেতর যেকোন জায়গা থেকে হাততালি দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেয়া যায়। দুর্গের ভেতর হওয়া সামান্যতম শব্দও সুলতান তাঁর শয়নকক্ষ থেকে স্পষ্ট শুনতে পেতেন। এছাড়া দেয়ালের কাছে গিয়ে কথা বললে অপরপাশে স্পষ্ট শোনা যেত। এভাবে দুর্গের ভেতর সুলতানের কর্মচারী ও সৈন্যরা একজন আরেকজনের সাথে দ্রুততার সাথে যোগাযোগ করতেন।
টিপসঃ
পর্যটকদের জন্য গোলকোন্ডা দুর্গের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০০ ভারতীয় রুপি।
খোলার সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত।
গোলকোন্ডা দুর্গ প্রতিদিন খোলা থাকে।
সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার জন্য হায়দ্রাবাদের রামোজি ফিল্ম সিটি সেরা একটি জায়গা। ২৫০০ একরের বিশাল এই ফিল্ম সিটিটি ভালোভাবে ঘুরতে চাইলে সারাদিন হাতে নিয়ে যাওয়া লাগবে। তেলেগু ফিল্ম প্রোডিউসার রামোজি রাও বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ফিল্ম সিটির নির্মাতা। এখানে হিন্দি, তেলেগু, তামিল, মালায়ালাম সহ আরো অনেক ভাষার সিনেমা ও টিভি শো’র শুটিং হয়ে থাকে।
রামোজি ফিল্ম সিটিতে একসাথে ৫০টি শ্যূটিং ইউনিট কাজ করতে পারবে। বিখ্যাত সিনেমা বাহুবলি, চেন্নাই এক্সপ্রেস, ডার্টি পিকচার এর শ্যুটিং এখানেই হয়েছিলো। বিশেষ করে বাহুবলির শ্যূটিং স্পটটি পর্যটকদের কাছে ভীষণভাবে প্রিয়।
রামোজি ফিল্ম সিটিতে সকাল ৮টার মধ্যে পৌছালে পর্যটকদের জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ অনুষ্ঠানটি দেখতে পাবেন। এরপর ট্যুরিস্ট বাসে করে সারাদিন ঘোরাঘুরি করতে পারবেন। ভেতরে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট আছে এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিনোদনের জন্য পার্ক, রাইড সহ নানারকম আয়োজন আছে। ফিল্ম সিটিটি দেখতে খুবই সুন্দর।
টিপসঃ
রামোজি ফিল্ম সিটিতে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন মূল্যের নানান রকম প্যাকেজ আছে। আপনার পছন্দের প্যাকেজটি বেছে নিয়ে মূল্য পরিশোধ করে প্রবেশ করতে হবে।
খোলার সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত।
রামোজি ফিল্ম সিটি প্রতিদিন খোলা থাকে।
হায়দ্রাবাদের নিজাম পরিবারের বাসস্থান চৌমহল্লা প্যালেস ৪টি আলাদা ইমারত নিয়ে তৈরি। ৪টি ইমারত ৪ জন নিজামের নামে রয়েছে। চৌমহল্লায় রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা বহুমূল্য কাঠের তৈরি আসবাব, গাড়ি, ঝাড়বাতি, মার্বেলের মূর্তি, ঘর সাজানোর শোপিস, থালাবাসন, ইত্যাদি। ৭ম নিজাম মীর ওসমান আলী খান ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ঐতিহাসিকদের মতে তিনি ভারত সরকারকে ৫,০০০ কেজি স্বর্ন দান করেছিলেন। চৌমহল্লা প্যালেস তাঁর সেই প্রাচুর্যের স্মৃতি হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতিটি বিল্ডিংয়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। একটিতে নিজাম পরিবারের মূল্যবান আসবাবপত্র সাজানো রয়েছে, একটিতে নিজামদের বহুমূল্য গাড়িগুলো (যার মধ্যে বিশ্বখ্যাত রোলস রয়েস ও রয়েছে) এবং আরেকটি নিজামদের সিংহাসন রয়েছে যেখানে তারা বিশেষ অতিথিদের সাথে দেখা করতেন। এই বিল্ডিংয়ে সারি সারি অনেকগুলো কক্ষ আছে যেগুলো নিজাম পরিবারের অতিথিশালা হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। কক্ষগুলো এখন খালি পড়ে আছে। এছাড়াও একটি বিল্ডিং বর্তমানে নিজামদের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বিল্ডিংয়ে পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ।
টিপসঃ
চৌমহল্লা প্যালেসে পর্যটকদের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০০ ভারতীয় রুপি।
খোলার সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত।
শুক্রবার ও জাতীয় ছুটির দিনগুলো বাদে প্রতিদিন খোলা থাকে।
সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার জন্য, বিশেষ করে আপনার সন্তানকে ইতিহাসের গল্প বলতে সালার জং মিউজিয়াম অসাধারণ একটি জায়গা। এই জাদুঘরটি একজন ব্যক্তি দ্বারা সংগৃহীত পুঁথি, শিল্প এবং মূল্যবান উপহারসামগ্রীর বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা। ৩য় সালার জং নওয়াব মীর ইউসুফ আলী খান ছিলেন নিজামদের সময়কালে হায়দ্রাবাদের প্রধানমন্ত্রী। ৩৫ বছর ধরে তিনি কয়েক হাজার চিত্র, ভাস্কর্য, দুষ্প্রাপ্য পুঁথি, সিরামিকের থালাবাসন, শোপিস, কার্পেট, ঘড়ি, এবং আসবাবপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
সালার জং মিউজিয়ামে এগুলো ছাড়াও রয়েছে ৭ম নিজামের সিলভার জুবিলীতে জনগণের কাছ থেকে পাওয়া অমূল্য কিছু উপহার। এই উপহারগুলোর মধ্যে আছে খাঁটি স্বর্ণ, রুপা ও হীরের তৈরি নানারকম উপঢৌকন। এর মধ্যে নিজাম এর একটি প্রতিকৃতিও রয়েছে যা পুরোটা হীরের গুড়ো দিয়ে আঁকা হয়েছে। আর রয়েছে সোনায় মোড়ানো সিংহাসন যেটিতে বসে তিনি তাঁর সিলভার জুবিলী পালন করেন। এছাড়া ৫ম নিজামের ১৭২ ফিট লম্বা দোতলা আলমারিও রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। ৫ম নিজাম অত্যন্ত শৌখিন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এক জামা দুবার পরতেন না, একবার পরেই বিলিয়ে দিতেন।
টিপসঃ
সালার জং মিউজিয়ামে পর্যটকদের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০০ ভারতীয় রুপি।
খোলার সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
শুক্রবার ও জাতীয় ছুটির দিনগুলো বাদে প্রতিদিন খোলা থাকে।
হায়দ্রাবাদ ভ্রমণে যেতে হলে আপনাকে অনলাইনে ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ইন্ডিয়ান ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা, ইন্ডিগো এয়ার ও স্পাইসজেট এর বেশ কটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই ফ্লাইটগুলোতে সাধারণত কলকাতা বা দিল্লির ট্রানজিট থাকে। ট্রানজিটের সময়ের পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে বিমান ভাড়া। ঢাকা টু হায়দ্রাবাদ বিমান ভাড়া ২০২২ ও ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসুন ভিজিট করুন flightexpert.com। কমপক্ষে ১৫ দিন আগে টিকেট কাটলে ভাড়া অনেক কমে পাবেন।
ট্রানজিট ফ্লাইটে ঢাকা থেকে হায়দ্রাবাদ পৌঁছাতে কমপক্ষে ছয় ঘন্টা ৩০ মিনিট সময় লাগে। ৩-৫ দিন সময় হাতে নিয়ে হায়দ্রাবাদ ঘুরতে যেতে পারলে ভালো।
হায়দ্রাবাদের সেরা হোটেলগুলো হচ্ছেঃ
কম খরচে থাকার মতো হায়দ্রাবাদের কিছু হোটেলের নাম দেয়া হলোঃ
Our Nest
হায়দ্রাবাদ এর হোটেল সম্পর্কিত তথ্য ও বুকিং এর জন্য আমাদের কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা আমাদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করুন।
হায়দ্রাবাদ ঘুরতে যাওয়ার আগে সব মিলিয়ে কত টাকা লাগতে পারে সে ব্যপারে ধারণা থাকা জরুরি। হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ খরচ নিম্নরুপঃ
রিটার্ন বিমান ভাড়া - জনপ্রতি ২২,০০০- ৩০,০০০ টাকা (যত আগে টিকেট কাটবেন তত কমে পাবেন)
হোটেল রুম ভাড়া - প্রতি রাত ৩,০০০- ৪,০০০ টাকা
সিম কার্ড - ১,২০০ টাকা
খাবার - দিন প্রতি ১,৫০০ টাকা
সুতরাং, সব মিলিয়ে ৫ দিনের হায়দ্রাবাদ ভ্রমণে যাতায়াত খরচ ও প্রবেশ ফি বাদে আপনার মোট খরচ হতে পারে প্রায় ৭০,০০০-৮০,০০০ টাকা। হোটেল রুম ও খাবার খরচে সাশ্রয়ী হলে খরচ আরো অনেক কমানো সম্ভব।
তো এই ছিলো হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত। ঢাকা থেকে হায়দ্রাবাদ বিমান ভাড়া কত জানতে ভিজিট করুন flightexpert.com। ইন্ডিয়ান ভিসা ও হায়দ্রাবাদ হোটেল সম্পর্কিত তথ্যের জন্য কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন।
ব্লগটি ভালো লাগলে ও আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ভিজিট করুন আমাদের ব্লগ পেইজটি।
আমাদের ভারত ভ্রমণ রিলেটেড অন্যান্য ব্লগগুলোঃ
কলকাতা ভ্রমণ গাইডঃ কিভাবে যাবেন ও কোথায় কোথায় ঘুরবেন
ঢাকা থেকে চেন্নাই এর সেরা হাসপাতাল-এ গিয়ে চিকিৎসা নিতে যা যা করা লাগবে
List of Best Hotels in Bangladesh
List of Best Hotels in Bangladesh
List of Best Hotels in Bangladesh
Biman Bangladesh Airlines – 12 Reasons to fly with Biman
By Rahat Muna
July 26, 2022
Thinker & Designer