কুয়ালালামপুর ভ্রমণ গাইডঃ দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ খরচ

কুয়ালালামপুর ভ্রমণ গাইডঃ দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ খরচ

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও চটকদার শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুন্দর এ শহরটি গড়ে উঠেছে কিছু অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন, জমকালো শপিং মল, দৃষ্টিনন্দন পার্ক-মসজিদ-মন্দির, বিলাসবহুল হোটেল, শ্বেতশুভ্র সমুদ্রসৈকত, আর মুখরোচক খাবার নিয়ে।


আমাদের কুয়ালালামপুর ভ্রমণ গাইডে থাকছে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর- যেমন কুয়ালালামপুরের দর্শনীয় স্থান কী কী, কুয়ালালামপুরে কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, এবং সব মিলিয়ে কত খরচ পড়বে ইত্যাদি। 


তো আসুন শুরু করা যাক।


কুয়ালালামপুর ভ্রমণ গাইডঃ দর্শনীয় স্থান


কুয়ালালামপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো নিম্নরুপঃ


কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার


কুয়ালালামপুর শহরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার এলাকা। বিলাসবহুল এই এলাকাটি জমকালো শপিং মল আর চোখ ধাঁধানো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর দোকান এবং হাই-এন্ড হোটেল ও রেস্টুরেন্ট দিয়ে ভরা। গুচি, রোলেক্স, শ্যানেল থেকে শুরু করে লুই ভিটন, নাইকি, হারমিজ– উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে নামীদামী ব্র্যান্ডগুলোর চেইন শপ রয়েছে কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টারের শপিং মলগুলোতে। এই এলাকাটি সারা বছরই ক্রেতা ও পর্যটকদের কারণে ব্যস্ত ও প্রাণবন্ত থাকে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে “মালয়েশিয়া ডে” উদযাপন করতে লোকাল মালয়েশিয়ানরা তাদের জাতীয় পোশাক পরে সিটি সেন্টার এলাকায় ভীড় করেন। সেদিন এলাকাটির পথ-ঘাট ভরে যায় নানা রঙের ছড়াছড়িতে।


স্পেশাল টিপসঃ


  • এয়ারপোর্ট থেকে ৫৫ কিমি দূরে সিটি সেন্টার অবস্থিত। এখানে আসতে চাইলে ট্যাক্সি/গ্র্যাব, পাবলিক বাস, এল আর টি/এম আর টি/ট্রেনে করে আসতে পারেন। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে খরচ কম লাগে।

  • সিটি সেন্টার এলাকাটি বেশ এক্সপেনসিভ। এখানে শপিং করতে চাইলে আপনাকে খরচ করার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে।

  • রিজনেবল প্রাইসে শপিং করতে চাইলে লিটল ইন্ডিয়া বা চায়নাটাউন এলাকায় চলে যান। সিটি সেন্টারের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম খরচে শপিং করতে পারবেন।

  • সিটি সেন্টারের আশেপাশে অনেকগুলো স্ট্রিট ফুডের দোকান আছে। সেখান থেকে কম খরচে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন।


পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারস

মালয়েশিয়ার বিখ্যাত পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারস চেনেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, পোস্টকার্ডে, অথবা স্কুলের পাঠ্যবইতে নিয়মিত চোখে পড়ে টুইন টাওয়ার এর ছবি। এই মুহুর্তে উচ্চতায় বিশ্বের বৃহত্তম টুইন টাওয়ার এটি। কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার এলাকার প্রধান পর্যটক আকর্ষণ এটি। দালানগুলোর ৮৬ তলার অবজারভেশন ডেকে দাঁড়িয়ে আপনি কুয়ালালামপুরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। অবজারভেশন ডেকে যেতে চাইলে আগেভাগে স্লট বুক করে রাখতে হবে। 


স্পেশাল টিপসঃ


  • হোটেল বাছাইয়ের সময় অনেকেই রুমের জানালা থেকে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের ভিউ পাওয়া যাবে এমন জায়গায় থাকতে চান। রাতের বেলা টাওয়ারের মাথায় জমকালো আলো জ্বলে। খুব সুন্দর লাগে দেখতে।

  • সোমবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

  • পর্যটকদের জন্য প্রবেশ ফি ৮০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। 


বাটু কেভস


বাটু কেভস বা বাটু গুহা মালয়েশিয়ার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য়ের অন্যতম অংশ। বিশেষ করে ভারতের বাইরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র মন্দির হিসেবে ধরা হয় বাটু কেভস এর মন্দিরকে। তামিল হিন্দুদের কাছে বাটু কেভস এর দেবতা মুরুগানের মূর্তি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। বাটু কেভস প্রাঙ্গণে ঢুকতেই আপনার চোখে পড়বে ১৪০ ফুট উচ্চতার দেবতা মুরুগানের মূর্তিটি। মূর্তিটির ঠিক পেছনে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে রয়েছে রংধনু রঙের ২৭২টি সিঁড়ি। বিশাল গুহার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরো অনেকগুলো দেব-দেবীর মন্দির। রংধনু রঙে রাঙানো সিঁড়িগুলোর সাথে লাইমস্টোনের পাহাড় ও গুহার মিশেলে দূর থেকে খুব সুন্দর লাগে বাটু কেভস দেখতে। 


স্পেশাল টিপসঃ


  • কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার থেকে ১৭ কিমি দূরে অবস্থিত বাটু কেভস। এখানে পৌঁছুতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যথা বাস বা ট্রেন ব্যবহার করা ভালো কারণ মন্দিরের সামনের জায়গাটিতে পার্কিং এর ভালো ব্যবস্থা নেই। 

  • সকাল সকাল পৌঁছাতে পারলে ভালো। বেলা যত বাড়বে তত বেশি পর্যটকেরা ভীড় করবে এখানে।

  • বাটু কেভস বছরের ৩৬৫ দিনই খোলা থাকে।

  • প্রধান মন্দিরে প্রবেশ ফ্রী। গুহায় ঢুকতে চাইলে ১৫ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত দিয়ে টিকেট কাটতে হবে। 

  • ধর্মীয় স্থানের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ শালীন পোষাক পরে মন্দিরে যেতে হবে। ছেলেরা শর্টস পরে যেতে পারবেন না। মেয়েরা স্কার্ফ জড়িয়ে নিলে ভালো।


কেএল টাওয়ার


আমাদের কুয়ালালামপুর ভ্রমণ গাইডে এরপর থাকছে মেনারা কুয়ালালামপুর বা কেএল টাওয়ার। এটি কুয়ালালামপুর তথা মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ টেলিযোগাযোগভিত্তিক ভবন। ৪২১ মিটার উঁচু এই ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ফ্রিস্ট্যান্ডিং ভবনগুলোর মধ্যে ৭ম স্থানে আছে। ১৯৯৩ সালে নির্মিত এই ভবনটি  মালয়েশিয়ার প্রধান টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভবনটিতে ৩০০ মিটার উচ্চতায় একটি স্কাই ডেক রয়েছে যেখান থেকে রোমাঞ্চ সন্ধানকারীরা নানারকম রোমাঞ্চকর কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান তাঁর ডন ২ মুভিতে এখান থেকেই বাঞ্জি জাম্পিং করেছিলেন।


স্পেশাল টিপসঃ


  • সিটি সেন্টার এলাকায় এলে কেএল টাওয়ারে পোঁছানোর জন্য আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। একটু ওপরে তাকালেই টাওয়ারটি চোখে পড়বে। হেটেই চলে যেতে পারবেন। 

  • সকাল সকাল (১০টার মধ্যে) চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে সকালের মৃদুমন্দ হাওয়ায় কুয়ালালামপুরের স্কাইলাইন পরিষ্কার দেখা যাবে। 

  • টাওয়ারটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

  • ভবনটি ঘুরে দেখতে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে। 

  • যাওয়ার আগে ওয়েদার আপডেট চেক করে যেতে ভুলবেন না। বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে কোন লাভ নেই। মেঘের কারণে কিছু দেখা যাবে না। 


কেএল ফরেস্ট ইকো পার্ক


প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য কুয়ালালামপুরের সেরা জায়গা কেএল ফরেস্ট ইকো পার্ক। অত্যাধুনিক অট্টালিকাবেষ্টিত কুয়ালালামপুর শহরের ঠিক মাঝখানে এ যেন এক আস্ত ঘন জঙ্গল। মালয়েশিয়ার প্রাচীনতম ফরেস্ট রিজার্ভ ও ইকো পার্কটির মাঝখান বরাবর চলে গেছে দড়ি দিয়ে বানানো ব্রিজ যাতে করে পর্যটকরা সহজে ও সুরক্ষিতভাবে পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে অসংখ্য গাছ-গাছালির সাথে সাথে বন্যপ্রাণীরও দেখা পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এখানে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্যাম্পিংও করতে পারবেন। 


  • কেএল ফরেস্ট ইকো পার্ক সারা বছর খোলা থাকে।

  • পার্কে প্রবেশের সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত।

  • পার্কের প্রবেশ ফি ৪০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।

  • কেএল টাওয়ার থেকে মাত্র এক কিমি’র হাঁটা পথ কেএল ফরেস্ট ইকো পার্ক।


কুয়ালালামপুর ভ্রমণঃ কিভাবে যাবেন?


কুয়ালালামপুর যেতে হলে আপনাকে মালয়েশিয়ার ভিসা করতে হবে। সুখবর হচ্ছে এই যে বাংলাদেশীরা মালয়েশিয়া ভিসার (ই-ভিসা) জন্য এখন অনলাইনেই এপ্লাই করতে পারবেন। মালয়েশিয়ার ভিসার জন্য এপ্লাই করতে আপনার যা যা লাগবে তা মালয়েশিয়ান হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। মালয়েশিয়া ভ্রমণ ভিসা খরচ ও অ্যাপ্লিকেশন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন। 


বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ারএশিয়া, মালিন্দো এয়ার, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর বেশ কটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা টু কুয়ালালামপুর বিমান ভাড়া ও ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসুন ভিজিট করুন flightexpert.com। কমপক্ষে এক মাস আগে টিকেট কাটলে ভাড়া অনেক কমে পাবেন।


সরাসরি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পৌঁছাতে লাগে প্রায় ৪ ঘন্টা। কমপক্ষে ৭ দিন সময় নিয়ে কুয়ালালামপুর ঘুরে আসুন। 


কুয়ালালামপুর হোটেলঃ কুয়ালালামপুর গিয়ে কোথায় থাকবেন?


কুয়ালালামপুর গিয়ে পর্যটকরা বিলাসবহুল হোটেলে থাকতে পছন্দ করেন। কুয়ালালামপুর সফরের একটা বড় অংশ এর লাক্সারিয়াস হোটেলগুলো। বেশিরভাগ মানুষই কুয়ালালামপুর যায় আরাম আয়েশে কয়টা দিন কাটাতে আর এর নামিদামী ব্র্যান্ডে ভরা শপিং মলগুলোতে শপিং করতে। তাই কুয়ালালামপুরের হোটেলগুলোও মোটামুটি চড়া দামে রুম ভাড়া দিয়ে থাকে। কেএল টাওয়ার বা পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারস এর আশেপাশেই সাধারণত ফাইভ স্টার হোটেলগুলো রয়েছে যার জানালা দিয়ে এই সুবিশাল অট্টালিকাগুলোর অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়। 


কিন্তু ফাইভ স্টার হোটেল সবার জন্য অ্যাফর্ডেবল নয়। তাই আমরা তুলনামূলক রিজনেবল প্রাইসে কুয়ালালামপুরে যে হোটেলগুলো আছে সেগুলোর একটা লিস্ট বানিয়েছিঃ



এই হোটেলগুলোর ভাড়া প্রতি রাতে ৪,০০০-৬,০০০ টাকার বেশি নয়। 


কুয়ালালামপুর ভ্রমণ খরচঃ কুয়ালালামপুর যেতে কত টাকা লাগে ২০২২


কুয়ালালামপুর ঘুরতে যাওয়ার আগে সব মিলিয়ে কত টাকা লাগতে পারে সে ব্যপারে ধারণা থাকা জরুরি। কুয়ালালামপুর ভ্রমণ খরচ নিম্নরুপঃ


রিটার্ন বিমান ভাড়া - জনপ্রতি ৪০,০০০- ৫০,০০০ টাকা (যত আগে টিকেট কাটবেন তত কমে পাবেন)

হোটেল রুম ভাড়া - প্রতি রাত ৪,০০০-৬,০০০ টাকা 

সিম কার্ড - ২২০ টাকা 

খাবার - দিন প্রতি ১,০০০ টাকা 

প্রবেশ ফি - ৪,০০০ টাকা


সুতরাং, সব মিলিয়ে ব্যাংকক ভ্রমণে আপনার মোট খরচ হতে পারে ১,০০,০০০-১,১০,০০০ টাকা।


পরিশেষে,


তো এই ছিলো কুয়ালালামপুর ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত। ঢাকা টু কুয়ালালামপুর বিমান ভাড়া সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন flightexpert.com। ভিসা ও হোটেল সম্পর্কিত তথ্যের জন্য কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন


ব্লগটি ভালো লাগলে ও আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ভিজিট করুন আমাদের ব্লগ পেইজটি

সৈকতের শহর নিয়ে আমাদের অন্যান্য ব্লগঃ

 

এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর কিছু সৈকতের শহর

মালদ্বীপ ভ্রমণ গাইডঃ হানিমুনের জন্য সবার প্রিয় গন্তব্য

বালি ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ

বাংলাদেশীদের জন্য সিঙ্গাপুর ভ্রমণ গাইড ২০২২

ব্যাংকক ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থান


By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :