হজ্জ্ব

হজ্জ্ব যাচ্ছেন? খেয়াল রাখতে হবে যেসব বিষয় । হাজীদের জন্যে কিছু টিপস ও পরামর্শ

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম ও অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো হজ্জ্ব। একে মূলত দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ্যবানদের ইবাদত বলে গণ্য করা হয়। নবীজি মুহাম্মদ (সঃ) মক্কায় সাহাবীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বলেছিলেন-

‘‘হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর (বায়তুল্লাহর) হজ্জ ফরয করেছেনঅতএব তোমরা হজ্জ পালন কর।’’


মূলত নিম্নোক্ত শর্তসমূহ পূরণ হলেই হজ্ব ফরয হয় :

১. মুসলমান হওয়া

২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া

৩. স্বাধীন হওয়া  (দাস না হওয়া)

৪. আর্থিক দিক থেকে হজ্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করা

৫. হজ্ব ফরয হওয়ার ইলম বা জ্ঞান থাকা

৬. হজ্বের সময় হওয়া।


এ বছর প্রায় ১,২৬,৭৯৮ জন বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে যেতে পারবেন। ঠিকঠাক নিয়ম না জানার কারনে এদের মধ্যে অনেকেই ভীন দেশে ভিন্ন পরিবেশে সম্মুখীন হতে পারেন নানারকম বিপত্তির। এসব এড়াতে তাই আগে থেকেই কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখা ভালো। যেমন-


১। মিনা ও আরাফাতে অনেকেই পথ ভুল করেন বা নানারকম সমস্যায় পড়েন। তাই যাবার আগেই মিনা ও আরাফাতের ম্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।

২। আগেই জানিয়ে রাখি- বাংলাদেশ হলো নন-জিসিসি (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের অধিভুক্ত নয় এমন) দেশ। এসব দেশগুলোর জন্য সৌদি আরব সরকার সাধারণত কিছু কিছু নিয়মে ভিন্নতা এনে থাকে। যেমন- হজ্জ্ব ভিসায় কেবল নন-জিসিসি দেশের নাগরিকরা জেদ্দা-মদিনা রুটে ভ্রমণ করতে পারবেন, অন্য কোথাও নয়।

৩। ১৪ জুলাই থেকে ২২ আগস্ট,২০১৮ এর মধ্যে বিজনেস, ট্যুরিস্ট বা ভিসিট ভিসাহোল্ডাররা জেদ্দা, মদিনা ও তাইফ রুটে কোন অবস্থাতেই চলাচল করতে পারবেন না।

৪। হজ্জ্ব পালনের ক্ষেত্রে অনেক সময় নিয়মাবলী বা কিছু নির্দেশনা সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল থাকেন না। সেক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত গাইডবুকটি অনুসরন করতে পারেন। 

৫। হজ্জ্বের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশ তারিখ শুরু হবে ১৪ জুলাই, ২০১৮ থেকে এবং প্রবেশের শেষ দিন হলো ১৫ অগাস্ট, ২০১৮। হজ্জ্ব সম্পন্ন করে ফিরে যাওয়ার শেষ তারিখ হলো ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, সৌদি আরব সময় সকাল ৮ঃ০০টা পর্যন্ত।

৬। দেশে ফেরার অন্তত ৩৬ ঘন্টা পূর্বে জেদ্দায় অবস্থিত এয়ারলাইন্স অফিসে টিকিট ও পাসপোর্ট জমা দিয়ে আপনার আসন নিশ্চিত করে নিন।

৭। দেশে ফেরার সময় অনেকেই নানা রকম শপিং করেন। খেয়াল রাখবেন- কোন অবস্থাতেই আপনি বাংলাদেশ সরকার ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অননুমোদিত কোন পণ্য নিয়ে আসতে পারবেন না। আর মালামালের ওজন ৩০ কেজির বেশি হলে প্রতি কেজির জন্য আপনাকে গুনতে হবে অতিরিক্ত মাশুল।

৬। হজ্জ্ব ভিসা ব্যতীত অন্য কোন ভিসা কোনভাবেই হজ্জ্ব করার জন্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এরকম অবস্থায় সৌদি সরকার এয়ারপোর্ট ক্রস করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, জোরপূর্বক দেশে ফেরত আসতে হতে পারে কিংবা পড়তে হতে পারে পুলিশি হয়রানীতেও।

তাই অবশ্যই হজ্জ্বে যাবার আগে আপনার এজেন্সির কাছ থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে নিন।

 

সম্মানিত হাজীদের জন্য কিছু পরামর্শ

  • হজ্জ্বের নিয়মাবলী ও করনীয় সংক্রান্ত কিছু বই পাওয়া যায়। এরকম কোন একটা বই সাথে রাখবেন।
  • সৌদি আরবের তাপমাত্রা একটু বেশী এবং সূর্যের তাপ ও অনেক প্রখর। তাই অবশ্যই সাথে একটি ছাতা রাখবেন।
  • কিছু শুকনো খাবার, খেজুর ও খাবার পানি সাথে রাখুন।
  • সাথে একটি কাল মার্কার কলম রাখুন যেন আপনার জিনিসপত্রের গায়ে নাম বা কোন সঙ্কেত লিখে রাখতে পারেন।
  • সাথে পর্যাপ্ত দড়ি ও স্কচ টেপ রাখুন।
  • যদি দলবদ্ধ ভাবে যান তাহলে সবাই যাতে দূর থেকেও একে অপরকে চিনতে পারেন এজন্যে একই রঙের টুপী ও মেয়েদের জন্যে একই রঙের স্কার্ফ ব্যাবহার করতে পারেন।
  • বিমানে উঠার সময়ে তারাহুড়া করবেন না। আপনার সিট আপনার নামেই রিজার্ভ থাকবে।
  • সাথে যথেষ্ট পরিমান টিস্যু পেপার রাখবেন।
  • এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে সিম কার্ড কেনার দরকার নাই। এক্ষেত্রে খরচ বেশী হবে। নায্য মুল্যে কিনতে চাইলে মক্কা অথবা মদিনা থেকে কিনুন।
  • যে হোটেলে অবস্থান করবেন সবসময় তার একটা কার্ড আপনার সাথে রাখুন। যদি কোন কারণে হারিয়ে যান তাহলে যে কাউকে দেখালে সহজেই সাহায্য পাবেন।
  • তাওয়াফ করার জন্যে সবচাইতে ভাল সময় হল এশার নামাযের পর। এই সময় ভিড় অপেক্ষাকৃত কম থাকে। তাই কম সময়ে বেশী তাওয়াফ করতে পারবেন।
  • মিনায় অবস্থান কালে তাবুর নম্বর সব সময় খেয়াল রাখবেন। হারিয়ে গেলে একমাত্র এই নম্বরই আপনাকে সঠিক তাবু তে পৌছাতে সাহায্য করতে পারবে।
  • দরকারি ওষুধ পত্র সাথে রাখবেন।

পরিশেষে আশা করছি আপনার পবিত্র হজ্জ নিরাপদ এবং সফল ভাবে সম্পন্ন হউক ইনশাল্লাহ।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :