ইবনে বতুতা

ইবনে বতুতাঃ সংক্ষেপে তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত এবং অন্যান্য তথ্য

ইবনে বতুতা (জন্মঃ ফেব্রুয়ারি ২৫, ১৩০৪ – মৃত্যু ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন প্রধানত একজন মরক্কান পর্যটক। অত্যন্তও মেধাবী এই আরব পাশাপাশি ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, বিচারক এবং ভূতত্ত্ববিদ।

 

ইবনে বতুতা সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

তিনি তাঞ্জিয়ের এর এক বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি তাঁর শৈশবকালের সব ঘটনা তার ভ্রমণ পঞ্জিতে লিপিবদ্ধ করে যান। এখান থেকেই আমরা পরবরতিতে তাঁর শৈশব সম্পর্কে জানতে পারি।


তিনি সুন্নি মালিকি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

 

১৩২৪ সালে তিনি হজের উদ্দেশে মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মুলত এখান থেকেই তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণ শুরু হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকার উপকূল ধরে তাঁর যাত্রা শুরু করেন এবং পথিমধ্যে অনেক জায়গায় বিরতি নেন। তিনি আবদ-আল-ওয়াদিদ এবং হাফসিদ নামক রাজ্য গুলো ভ্রমণ করেন। এরপর তলেমসেন, বেজাইজা এবং তিউনিসিয়া ভ্রমণ করেন। মক্কা পৌছাতে তাঁর ১৬ মাস সময় লেগে যায়।


যদিও তিনি একাকি ভ্রমনে বের হয়েছিলেন, তারপরও তিনি সব সময় কোন না কোন কাফেলার সাথে চলাফেরা করতেন। একাকি চলাফেরা করলে দস্যুদের কবলে পরার সম্ভাবনা ছিল।


১৩২৬ সালের বসন্তকালে ইবনে বতুতা মিসরের বিখ্যাত শহর আলেক্সান্দ্রিয়া তে পৌঁছান। তখন বাহ্রি মামলুক শাসনামল চলমান ছিল। এখানে পৌছাতে তাকে ২০০০ মাইল পথ অতিক্রম করতে হয়। এখানে তিনি কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করেন। সেখান থেকে তিনি কায়রো গমন করেন। সেখানে একমাস থাকেন।


এর পর কায়রো থেকে হেব্রন, জেরুজালেম এবং বেথেলহেম হয়ে দামেস্ক ভ্রমণ করেন। দামেস্কে তিনি পুরো রমজান মাস অতিবাহিত করেন। এর পর তিনি একটি কাফেলায় যুক্ত হন এবং ৮০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় গিয়ে মহানবী (সাঃ) এর রউজা মুবারক দেখতে যান।


মক্কা থেকে তিনি ইরাকগামী একটি কাফেলার সাথে যুক্ত হন এবং যাত্রা শুরু করেন। এরপর বাগদাদ অভিমুখে না গিয়ে পারস্যের দিকে যাত্রা করেন। তিনি ওয়াসিত নগর ভ্রমণ করেন। এরপর টাইগ্রিস নদীর পার ধরে প্রসিদ্ধ বসরায় পৌঁছান।


১৩৩১ সালের দিকে ইবনে বতুতা সোমালিয়ার বিখ্যাত শহর মাগাদিসু তে অবস্থান করছিলেন। এই শহরের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লিখেনঃ ‘’ অত্যন্ত বৃহৎ প্রসিদ্ধ নগর।‘’


এরপর তিনি এশিয়া অভিমুখে যাত্রার পরিকল্পনা করেন। ১৩৩২ সালে তিনি কনস্তানটিনোপল (বর্তমান তুরস্ক) পৌঁছান। তুরস্কের বেশ কিছু এলাকা ভ্রমণের পর আফগানিস্তান হয়ে ১৩৩৩ সালে তিনি দিল্লি পৌঁছান সেখানে সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের সাথে দেখা করেন। সুলতান তাঁকে কাজী পদে নিযুক্ত করেন। তিনি প্রায় ছয় বছর সেখানে কাজ করেন।


এরপর তিনি মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন। ১৩৪৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছান। হজরত শাহ জালালে (রহঃ) সাহেবের সাথে দেখা করার ইচ্ছায় এর পর তিনি সিলেট যাত্রা করেন। ১ মাস পর তিনি সিলেট পৌঁছান এবং হজরত শাহ জালাল (রহঃ) এর সাথে দেখা করেন।


এর পর তিনি জাহাজ যোগে সোয়াহিলি উপকূল এবং মম্বাসা দ্বিপ ভ্রমণ করেন। ১৩৪৫ শেষের এর দিকে তিনি চিনের কুওানঝু প্রদেশে পৌঁছান। সেখানে স্থানীয় মুসলমানরা তাকে সাদর সম্ভাষণ জানান। ১৩৪৬ সালে তিনি পুনরায় মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।


অবশেষে ১৩৫৪ সালে জন্মভুমি মরক্কতে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনি লেখা শুরু করেন। “A Gift to Those Who Contemplate the Wonders of Cities and the Marvels of Travelling”  শিরোনামে এই লেখাটি তাঁর ভ্রমণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য দলিল।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :