হজ্ব ২০২২

হজ্ব ২০২২ কবে? হজ্ব করতে কত দিন লাগে?

হজ্ব ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি। হজ্বের আভিধানিক অর্থ “ইচ্ছা করা”, “সংকল্প করা “, “পর্যবেক্ষণ করা” ইত্যাদি। নিদির্ষ্ট সময়ে, নিদির্ষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ও  কাজ সম্পন্ন করে কাবা শরীফ ও  অন্যান্য স্থান চক্রাকারে পরিভ্রমণ করাকে হজ্ব বলে।


এই আর্টিকেলে আমরা হজ্ব ২০২২ নিয়ে আলোচনা করবো। তো শুরু করা যাক। 


হজ্ব ২০২২ কবে? হজ্ব করতে কত দিন লাগে?


হজ্ব করতে মোট ৫ দিন লাগে। জিলহজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ, এই ৫ দিন হজ্ব হয়।


করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর থেকে সৌদি সরকার আবার বিদেশীদের জন্য হজ্ব চালু করেছে। সেই হিসেবে আগামী ৭ জুলাই শুরু হবে এবারের হজ্ব ২০২২। আর বাংলাদেশ সরকার হজ্ব ফ্লাইট চালু করবে ৫ জুলাই থেকে। 


হজ্ব করতে কত টাকা লাগে?


বাংলাদেশ থেকে হজ্বে যাওয়ার খরচ সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪,৬২,১৫০ টাকা থেকে ৫,২৭,৩৪০ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালে ২ ধরনের হজ্জ প্যাকেজ ঘোষনা করেছে। হজ্ব রেজিস্ট্রেশন ২০২২ অনুযায়ী, প্যাকেজ-১ এ মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। আর আপনি যদি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জ করতে চান তবে আপনার  ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্ব ও ওমরাহ্‌ করা যায়। 


হজ্বের ইতিহাস


হজ্বের নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তবে হজ্বের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন নবী ইব্রাহিম (আঃ) - কাবা শরীফ নির্মাণের মাধ্যমে।  


ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী, আল্লাহ্‌তাআলা ইব্রাহিম (আঃ) এর ওপর তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) কে মক্কার মরুভূমিতে একা ফেলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শিশু ইসমাইল এর পানির পিপাসা পেলে পানির সন্ধানে মা হাজেরা মরিয়া হয়ে দৌড়ান সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে।


 তিনি সাতবার এ মাথা থেকে ও মাথা দৌড়ালেন কিন্তু পানির সন্ধান পেলেন না।  খালি হাতে হতাশাগ্রস্ত হাজেরা ফিরে যান শিশু ইসমাইলের কাছে। ফিরে দেখেন পিপাসায় ক্লান্ত দুধের শিশুটির পা মাটিতে আছড়ে পড়ছে আর তার পায়ের নীচে একটি সদ্য প্রবাহিত ঝর্ণা তৈরি হয়েছে।


মা হাজেরার স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে নবীজি সাফা মারওয়া পাহাড়ে হাজীদের ৭ বার তাওয়াফ করার নিয়ম প্রণয়ন করেন। 


ইব্রাহিম আল্লাহ্‌র আদেশে তার পুত্র ইসমাইলের সহায়তায় তৈরি করেন পবিত্র কাবা ঘর। কাবা শরীফের শেষ পাথরটি বেহেশত থেকে জিবরাঈল (আঃ) নিয়ে আসেন যার নাম হাজরে আসওয়াদ। 


পরে এক পর্যায়ে কুরাইশরা কাবায় ৩৬০টি দেবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহর বদলে এই মূর্তিগুলোর ইবাদাত করতে থাকে। সেই সাথে পবিত্র কাবা শরীফে নানারকম অনৈতিক ও অশালীন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে থাকে। এসব কারণে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নবম হিজরিতে হজ্ব পালন করতে যাননি। তিনি আবু বকর (রাঃ) এর নেতৃত্বে তিনশো সাহাবি নিয়ে গঠিত একটি দল পাঠান। 


এরপর দশম হিজরিতে নবী করিম (সাঃ) নিজে হজ্বের নেতৃত্ব দেন। হ্জ্ব কীভাবে পালন করা উচিত তা তিনি এই হজ্বে নির্দিষ্ট করে দেন। এ বছর হজ্ব জিলহজ্জ মাসে সম্পন্ন হয়। ইতিহাসে এই হজ্ব ‘বিদায়ী হজ্ব’ নামে অভিহিত। 


এরপর থেকে প্রতিবছর আল্লাহ্‌র রাসূলের নির্দেশ মোতাবেক জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখে পবিত্র হজ্ব সংঘটিত হয়।  


হজ্বের গুরুত্ব


মুসলমানদের জন্য হজ্ব ফরজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ্ব করা আবশ্যিক, যদি সে হজ্ব পালনের শর্তাবলি অনুযায়ী সক্ষম হয়। হজ্জ পালনের শর্তগুলো হলো: 


  • প্রাপ্ত বয়স, 

  • শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, 

  • আর্থিক স্বচ্ছলতা; অর্থাৎ ফিরে আসা পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্যবৃন্দের ভরণ-পোষণের নিশ্চয়তা।

  • পথের নিরাপত্তা এবং 

  • মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বামী বা অবিবাহযোগ্য আত্মীয়কে সহযাত্রী করা।


জীবদ্দশায় হজ্ব করতে পারেনি এমন ব্যক্তি বদলি হজ্বের ওয়াসিয়াত করতে পারেন। তিনি মারা গেলে তার সম্পত্তি থেকে কাফন-দাফনের খরচ ও ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অংশের এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা হজ্বের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হলে তার ওয়ারিশদের ওপর তার পক্ষে হজ্ব করা ওয়াজিব হয়।


আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদিসে নবিজী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেনঃ 


"যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বিরত থাকে, সে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে। অর্থাৎ নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে যায়।"     


এরুপ আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেনঃ 


"শয়তান আরাফাহর দিন সবচেয়ে লজ্জিত ও অপদস্থ হয়, কেননা ওই দিন আল্লাহ্‌ তার বান্দার প্রতি অগুণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ মাফ করে দেন।"


হজ্বের নিয়ম


হজ্ব তিন প্রকারে সম্পন্ন করা যায়:  ইফরাদ, অর্থাৎ শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম করা ও ওমরাহ্ ব্যতীত হজ্ব করা; কিরান, অর্থাৎ ওমরাহ ও হজ্জ ওমরাহর  ইহরাম এক সঙ্গে করা; ওমরাহ সম্পাদন করে পরে হজ্জ করতে হয়; তামাত্তু, অর্থাৎ প্রথমে শুধু ওমরাহর ইহরাম করা ও ওমরাহ শেষে ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়া এবং পরে  পুনরায় হজ্জের ইহরাম করা ও হজ্জ সম্পাদন করা। হজ্জের অনুষ্ঠানগুলি পবিত্র পরিবেশ ও অবস্থার মধ্যে সম্পন্ন করতে হয় বিধায় ইহরাম অপরিহার্য। মক্কা থেকে দূরে যাদের বাড়ি তাদেরকে মক্কা যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে সেখানেই ইহরাম সম্পন্ন করতে হয়। এই নির্দিষ্ট স্থানকে বলা হয় ‘মীকাত’। হজ্জের দিন ছাড়া অন্য দিন গেলে ওমরাহ বা ছোট হজ্জ পালন করতে হয়। ওমরাহর জন্য কোনো দিন-তারিখ নির্দিষ্ট নেই। কা’বা ঘরে সাতবার তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ায় সাতবার সাঈ সম্পন্ন হলেই ওমরাহ সম্পন্ন হয়। 


হজ্বের ফরজ ৩টি। 


  • ইহরাম বাঁধা।

  • আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।

  • তাওয়াফ করা।


হজ্বের ওয়াজিব ৬টি।


  • মিনায় অবস্থান করা।

  • মুজদালিফায় রাত্রী যাপন করা।

  • মিনায় শয়তানের ওপর পাথর মারা ও মাথা মুন্ডন।

  • কুরবানি করা। 

  • সায়ী করা বা দৌড়ানো।  

  • বিদায় তাওয়াফ করা।


হজের সুন্নত ১০টি।


  • তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজ্বকারীর জন্য)।

  • তাওয়াফের সময় প্রথম তিন বার দ্রুত চলা।  

  • খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন তিন জায়গায় খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। ৯ ই জিলহজ্জ আরাফাতের মসজিদে নামিরাতে,৭ ই জিলহজ্জ কাবার হারাম শরীফে, ১১ ই জিলজ্জ  মিনায়।

  • ৮ ই জিলহজ্জ মক্কা শরীফ থেকে মিনায় গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা।  

  • ৯ ই জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া। 

  • রওনা হওয়ার আগে গোসল বা ওযু করে রওনা দেয়া।

  • ৯ ই জিলহজ্জ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা।

  • ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ্জ মিনায় রাত্রী যাপন করা। 

  • মিনা থেকে মক্কা যাওয়ার সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামক স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা।


শেষ কথা


তো এই ছিলো আমাদের হজ্ব ২০২২ সম্পর্কে কিছু বেসিক প্রশ্ন ও তাদের উত্তর। আশা করি আমরা আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। হজ্ব প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন ফ্লাইট এক্সপার্টের সাথে। 


আর্টিকেলটি ভালো লাগলে এবং আরো পড়তে চাইলে চলে যান আমাদের ব্লগ অংশে।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :