দুবাই ভ্রমণ গাইডঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর

দুবাই ভ্রমণ গাইডঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর

বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী শহর দুবাই । দুবাই কে বলা হয় “দ্যা মোস্ট ফিউচারিস্টিক সিটি”। এর উত্থান হয়েছে মূলত গত ৩৫ বছরে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দুবাই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলে না, বরং উন্নত বিশ্ব দুবাইকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে।


দুবাই ঘুরতে যেতে চান? এই ব্লগে পাবেন আপনার দুবাই ভ্রমণ এ দর্শনীয় স্থান, কীভাবে সেখানে যেতে হবে, দুবাই গিয়ে কোথায় থাকবেন এবং মোট ভ্রমণ খরচ কত হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। 


তো চলুন শুরু করা যাক। 


দুবাই ভ্রমণঃ দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্য


আপনি কি জানেন? ১৮ শতকের শেষ দিক পর্যন্তও দুবাইয়ে ১,২০০ মানুষের বাস ছিলো যাদের অধিকাংশেরই জীবিকা ছিলো মাছ ধরা। সেই সাধারণ জেলেপাড়া থেকে আজকের ৩.৩ মিলিওন মানুষের বাসস্থান দুবাইয়ের বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার গল্পটি সবার মনে কৌতূহল জাগায়। এই ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে মূলত খনিজ তেল ও দুবাই এর ক্ষমতাসীনদের দুরদর্শীতাই মূল কারণ।


প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এর হাত ধরেই মূলত দুবাই তার আজকের এই রুপ পেয়েছে। তিনি গত ২০০৬ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তার দুরদর্শীতা ও প্ল্যানিং এর কারণেই গড়ে ওঠে বুর্জ খলিফা, বুর্জ আল আমির, পাম জুমেইরা, মিউজিয়াম অফ দ্যা ফিউচার সহ বিশ্বখ্যাত সব স্থাপনা। আজকের দুবাই এর আধুনাকয়ন এর পেছনে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এর অবদান অনস্বীকার্য।


দুবাই ভ্রমণ গাইড


তো চলুন দেখা যাক দুবাই ঘুরতে গেলে কোন কোন জায়গায় যাওয়া মাস্ট আর সেখানে গিয়ে কি কি করতে পারেনঃ


  • বুর্জ খলিফা




দুবাই এর গৌরব বুর্জ খলিফার উচ্চতা ২,৭১৭ ফুট বা ৮২৮ মিটার। ১৬৩ তলা বিশিষ্ট বুর্জ খলিফা গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ঠাই পেয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালান ও সবচেয়ে বেশি তলা বিশিষ্ট দালান হিসেবে। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে বুর্জ খলিফা যেতে গাড়িতে ১৬ মিনিট লাগে।


১২,০০০ শ্রমিকের টানা ৬ বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফসল আজকের বুর্জ খলিফা। দালানটি এতই বড় পরিসরে তৈরি যে একে একটি আস্ত শহর বললেও ভুল হবে না। এটি একাধারে বাসস্থান, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক, সাংস্কৃতিক, বিনোদন, সহ অন্যান্য আরো অনেক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্যাফে রেস্টুরেন্ট, স্কাই লবি, সুইমিং পুল, জাকুজ্জি, সিনেমা থিয়েটার, এপার্টমেন্ট, জিম, শপিং সেন্টারসহ আরো অনেক কিছু রয়েছে এই একটি দালানের ভেতরে।


দালানটির ১২৪ তলায় রয়েছে অবজারভেশন ডেক যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি ৯৪ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ৩৬০-ডিগ্রী প্যানারমিক ভিউ দেখতে পাবেন । নীচতলা থেকে ১২৪ তলার অবজারভেশন ডেকে যেতে আপনার সময় লাগবে ১ মিনিট কারণ যে লিফটটিতে করে আপনি যাবেন সেটি বিশ্বের দ্রুততম লিফট। অবজারভেশন ডেকে যাওয়ার এন্ট্রি ফি বড়দের ৩,৮০০ টাকা ও ছোটদের ২,৯০০ টাকার মতো।



এছাড়াও টপ ফ্লোরে রয়েছে পৃথিবীর উচ্চতম রেস্টুরেন্ট At.mosphere যেখানে বসে চা খেতে খেতে আপনি দেখতে পারবেন নীচে পিপড়ার সমান দালান, গাড়ি-ঘোড়া আর দুবাই এর অদ্ভুত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ। এখানে গোল্ড প্লেটেড কফি পাওয়া যায়। 

  • দুবাই ফাউন্টেন




দুবাই এর অন্যতম আকর্ষণ দুবাই ফাউন্টেন। এ ফাউন্টেনটি বুর্জ খলিফার সামনের লেকে অবস্থিত। প্রতিদিন সূর্যাস্তের পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুবাই ফাউন্টেনে পানির মনোরম নাচ দেখা যায়। প্রতি আধা ঘন্টা পর পর কিছুক্ষণের জন্য জেগে ওঠে ফাউন্টেনের পানি। এর পানি ১৫০ মিটার বা ৪৯২ ফুট পর্যন্ত ওপরে ওঠে। শো দেখার জন্য আপনি চাইলে ৫১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে পানির একদম কাছের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে শো দেখতে যেতে পারেন অথবা আশেপাশের রেস্টুরেন্টে বসে শো উপভোগ করতে পারেন। 

  

  • আটলান্টিস হোটেল - পাম জুমেইরাহ




পাম জুমেইরাহ পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ যা ভূমি পুনরুদ্ধার প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়েছিলো। প্রায় ১০,০০০ মানুষ বাস করে মনুষ্য-নির্মিত এই দ্বীপপুঞ্জে। পাম জুমেইরাহ দুবাই এর অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের বাসস্থান। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই রয়েছে এই দ্বীপপুঞ্জে। এখানে শত শত লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দ্যা আটলান্টিস হোটেল।

 

পাম জুমেইরাহ’র সবচেয়ে বড় হোটেল দ্যা আটলান্টিস হোটেল। এটি দ্বীপের একদম শেষ মাথায় অবস্থিত। এই বিলাসবহুল হোটেলে একরাত কাটাতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ন্যুনতম ৪০,০০০ টাকা। হোটেলের বারান্দা থেকে পারস্য উপসাগর ও দুবাই শহর মিলিয়ে অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিগণ আটলান্টিসে এসে আশ্রয় নেন বিলাসিতায় সময় কাটানোর জন্য। আটলান্টিসে রয়েছে দুবাই এর সবচেয়ে বড় মাছের একুরিয়াম ও ওয়াটারপার্ক।


  • দুবাই মল




বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আর আরব আমিরাতের বৃহত্তম শপিং সেন্টার দুবাই মল। ২০১১ সালে রেকর্ড ৫৪ মিলিওন মানুষ ঘুরতে আসে দুবাই মলে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ শপিং করতে ও ঘুরতে আসে দুবাই মলে। দুবাই মলে আছে ১২০০টি দোকান, বিশাল দুবাই একুয়ারিয়াম যেখানে ৩০০’র বেশি প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী আছে, একটি ভিআর পার্ক, একটি বিনোদনের পার্ক (হন্টেড হাউজ), অনেকগুলো ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট। বিশাল এই শপিং মলে পাওয়া যায় না এমন কিছু নেই। ঘুরতে ঘুরতে পায়ে ব্যথা করলে ঢুকে যেতে পারেন কাছাকাছি কোন রেস্টুরেন্টে। 


  • দুবাই ক্রিক




দুবাই ক্রিক দুবাই এর পুরাতন অংশে অবস্থিত। দুবাই এর মানুষের কাছে এর ঐতিহাসিক মর্যাদা রয়েছে। পোর্ট রশীদ এই ক্রিকের ধারেই ছিলো যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে দুবাই তথা সংযুক্ত আরব আমিরাত বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি লাভ করে। পোর্ট রশীদ দিয়েই দুবাই এর সাথে সমগ্র পৃথিবীর পণ্য আদান প্রদান হতো।

২০০৫ সালে জাবেল আলী পোর্ট নির্মাণের সময় ক্রিকটি আরো প্রসারিত হয়।


দুবাই ক্রিকে নৌকায় করে এপার থেকে ওপার যাওয়ার সময় খুব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। মাথার ওপর উড়ে বেড়ায় শঙ্খচিল। 


  • দুবাই মরুভূমি




আরব মরুভূমির ২২৫ স্কয়ার কিলোমিটার নিয়ে দুবাই মরুভূমি অবস্থিত। এটি দুবাই এর মোট আয়তনের ৫ ভাগ। ট্যুরিস্টদের জন্য দুবাই মরুভূমি ভ্রমণের জন্য একটি ভালো অপশন দুবাই ডেজার্ট সাফারি। ডেজার্ট সাফারিতে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী ৯,৩০০ টাকা থেকে ৯৩,০০০ টাকা এর মধ্যে প্যাকেজ কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।


দুবাই শহর থেকে প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত দুবাই মরুভূমি। সুতরাং দুবাই মরুভূমি ঘুরতে যেতে চাইলে সাফারি প্যাকেজ নিলে ভালো হয়। সাফারি প্যাকেজের মধ্যে থাকবে যাতায়াত, ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস, লাঞ্চ বা ডিনার (কোন সময়ে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে), উটের পিঠে চড়ে বিশেষ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা, ও রাতে মরুভূমিতে অবস্থান থেকে শুরু করে আরো অনেক বিলাসবহুল ব্যবস্থা। আপনি সুবিধা অনুযায়ী প্যাকেজ এ সেবা বাড়াতে কমাতে পারবেন।  


দুবাই গেলে দুবাই মরুভূমি দেখতে যাওয়া মাস্ট। এই অতুলনীয় অভিজ্ঞতা নিতে ভুলবেন না।


  • দুবাই ফ্রেম




দুবাই এর জাবিল পার্কে অবস্থিত বিখ্যাত দুবাই ফ্রেম। স্থাপত্যশৈলীর এই অসাধারণ উদাহরনটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রেমের রেকর্ডপ্রাপ্ত। ৪৯৩ ফুট আয়তনের এই বিশাল ফ্রেমটির একদম ওপরতলায় রয়েছে একটি অবজারভেশন ডেক যেখান থেকে আপনি পুরো দুবাই শহরটি দেখতে পাবেন। 


ফ্রেমটির বিশেষত্ব এই যে আপনি ডেকের এক সাইড থেকে দেখতে পাবেন দুবাই এর পুরাতন অংশকে যা দুবাই এর সোনালী অতীতকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর ফ্রেমের আরেক সাইড থেকে দেখতে পাবেন বড় বড় ইমারত নিয়ে আধুনিক দুবাইকে, যা দুবাই এর অপার সম্ভাবনাকে প্রতিনিধিত্ব করে।


  • মিউজিয়াম অফ দ্যা ফিউচার




বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনা ভাবা হয় দুবাইয়ের মিউজিয়াম অফ দ্যা ফিউচার এর ভবনটিকে। ৫টি ভাগ বিভক্ত এই ভবনটিতে প্রদর্শিত হয় ভবিষ্যবাদী ধারণা, পণ্য ও সেবা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সরোবটিক্স এর ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে বানানো হয়েছে এর ৫টি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগই বানানো হয়েছে অনন্য কিছু ধারণা নিয়ে। মিউজিয়াম অফ দ্যা ফিউচার দুবাই সরকার প্রণীত প্রযুক্তির ব্যবহার ও দুরদর্শিতাকে প্রতিনিধিত্ব করে যা দুবাইয়ের মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।


২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া যাদুঘরটি সবার জন্য খোলা।  যাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা। টিকেট এর মূল্য প্রায় ৩,৭০০ টাকা।  চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন অসাধারণ এই জায়গাটি। ছেলে বুড়ো সবার ভালো লাগার মতো একটি জায়গা এটি।  


  • দুবাই মিরাকল গার্ডেন




৭২,০০০ স্কয়ার কিলোমিটার নিয়ে গঠিত দুবাই মিরাকল গার্ডেন একটি বিশাল ফুলের বাগান যেখানে ১৫০ প্রজাতিরও বেশি ফুল রয়েছে। এই ফুলের স্বর্গে রয়েছে হাজার হাজার ফুটন্ত ফুলের বাগিচা আর ফুলের তৈরি নানা রকম ভাস্কর্য। এই বাগানে আছে সারি সারি সূর্যমুখী, এক ভাসন্ত মহিলার ভাস্কর্য, ফুলের তৈরি ঘড়ি, ময়ূর, আর একটি বিশাল প্লেন এমিরেটস এর এ৩৮০ এর আদলে ফুলের তৈরি ভাস্কর্য। এছাড়াও আছে বিখ্যাত কার্টুন স্মার্ফস এর গ্রামের আদলে তৈরি স্মার্ফস ভিলেজ, ছাতা আকৃতির টানেল, একটি লেক পার্ক, একটি ফুলে ছাওয়া পাহাড়, আর কিছু অদ্ভুত সুন্দর ফুলের থ্রীডি ডিজাইন।  


জায়গাটি বাচ্চাদের খুব পছন্দের। নানান রঙের ফুল আর মাতাল করা সুবাস কার না ভালো লাগে! বাগানের এরিয়ার মধ্যে একটি স্যুভেনির এর দোকান, একটি ফোটো বুথ, আর একটি বাজার আছে। এছাড়াও অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে আছে বলে এখানে খাবারের ভালো ব্যবস্থা আছে।


টিকেট মূল্য জনপ্রতি ৫,০০০ টাকা। মিরাকল গার্ডেন এই মুহুর্তে বন্ধ রয়েছে। অক্টোবরে ফুল ফোটার সময় হলে এটি আবার খুলবে।


  • দুবাই মেরিনা




দুবাই এর সবচেয়ে দামী আবাসিক জায়গা দুবাই মেরিনা। এখানে দুবাইয়ের ধনী ও বিত্তবান শ্রেণীর  বাস। দুবাই মেরিনার ওপর দিয়ে ধনীদের ইয়ট ও ফেরি চলাচল করে। সূর্যাস্তের সময় মেরিনা থেকে দুবাই এর উঁচু ইমারতগুলোর পেছনে সূর্য অস্ত যায় যা দেখতে অসাধারণ লাগে। মেরিনার আশেপাশে প্রচুর শপিং মল ও রেস্টুরেন্ট আছে অর্থাৎ বিনোদনের অভাব নেই এখানে। 


দুবাই মেরিনাতে হেঁটে হেঁটে চারপাশ দেখতে সুবিধা। এখানে এসে আপনি সোজা বীচে চলে যেতে পারেন নতুবা ব্রডওয়াক ধরে হাঁটতে পারেন। ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য মেরিনা ভালো অপশন হবে না কারণ এখানে এক রাত থাকার খরচ অনেক। সূর্যাস্তের আগে আগে এসে সন্ধ্যেটা মেরিনায় কাটাতে পারেন আর রাতের ডিনারটা কোন রেস্টুরেন্টে সেরে নিয়ে রাতেই হোটেলে ব্যাক করতে পারেন। রাতের জমকালো মেরিনা ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।


  • দুবাই এর এমিউজমেন্ট পার্ক




রোমাঞ্চকর জায়গার অভাব নেই দুবাই শহরে। শহরের অনেকগুলো বিনোদনমূলক পার্কের মধ্যে একুয়াভেঞ্চার ওয়াটারপার্ক, স্কি দুবাই, ওয়াইল্ড ওয়াদি ওয়াটারপার্ক, আইএমজি ওয়ার্ল্ডস অফ এডভেঞ্চার, বলিউড পার্ক, লেগোল্যান্ড দুবাই, মোশনগেট দুবাই অন্যতম। এর মধ্যে একুয়াভেঞ্চার ওয়াটারপার্ক ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ওয়াটারপার্ক। 


পার্কগুলোতে রয়েছে অনেক অনেক এক্সাইটিং রাইড যা আপনার গতানুগতিক জীবনে প্রাণের ছোঁয়া এনে দিবে। বিশেষত ওয়াটার স্লাইডগুলো আর স্কি রিঙ্কটি অনেক বেশি উপভোগ্য। এই স্থানগুলোতে পরিবার নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাচ্চাদের থেকে শুরু করে বড়রা– সবাই এই পার্কগুলোর রাইডে চড়তে পছন্দ করবেন। প্রতিটি পার্কের এন্ট্রি ফি ও রাইড এর মূল্য আলাদা তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই চেক করে যাবেন।


  • লা মের




লা মের দুবাই এর সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত। এর ধার ঘেষে শত শত ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট  আছে। এছাড়াও আছে একটি ওয়াটারপার্ক, একটি স্কেটবোর্ড পার্ক, একটি ট্র্যাম্পোলিন পার্ক ও একটি সিনেপ্লেক্স। লা মের দুবাই এর জনসাধারণের কাছে ও ট্যুরিস্টদের কাছে সমান প্রিয়। সন্ধ্যাবেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার মতো জায়গা এটি। 


লা মের এ একটি পুরো দিন কাটাতে চাইলে পর্যাপ্ত সানস্ক্রিন নিয়ে বীচে চলে যান। অথবা হাঁটতে হাঁটতে বীচ ধরে অনেকদূর চলে যেতে পারেন। লা মের এর বীচ সেলফি তোলা ও অলস সময় কাটানোর জন্য বেস্ট জায়গা। এরপর ঘুরে আসতে পারেন লাগুনা ওয়াটারপার্কে। সেখানে ওয়াটার রাইডে চড়ে মজা করতে পারেন। শেষবেলায় রক্সি সিনেমাতে দেখে নিতে পারেন নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত কোন সিনেমা। 


  • বুর্জ আল আরব




বিশ্বের একমাত্র ৭-তারকা হোটেল বুর্জ আল আরব দুবাই এ অবস্থিত। কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি বিলাসবহুল এই পাল-আকৃতির হোটেলটিতে এক রাত থাকতে আপনার খরচ হবে ন্যুনতম ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। এছাড়াও এ হোটেল এ রিজার্ভেশন কনফার্ম করার আগে হোটেল কর্তৃপক্ষ আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করবে। বিশ্বের নামিদামী ব্যক্তিগণ এই হোটেলে অবস্থান করার সু্যোগ পান।


জাঁকজমকপূর্ণ এই হোটেলটিতে নন-গেস্টরা সাধারণত ঢুকতে পারে না। কিন্তু আপনি যদি হোটেলের কোন রেস্টুরেন্টে রিজার্ভেশন নিয়ে রাখেন তবে আপনি ঢুকতে পারবেন। সর্বনিম্ন মূল্যে এককাপ চা খেয়ে আসতে পারেন এখানকার স্কাইভিউ লাউঞ্জে গিয়ে। 


  • দুবাই গোল্ড স্যুক 




দুবাই গোল্ড স্যুক দুবাই এর ঐতিহ্যবাহী গহনার মার্কেট। ৩৮০’র ও বেশি খুচরা ব্যবসায়ীর গোল্ডের দোকান এখানে। এর মধ্যে কিছু দোকান শতবর্ষী আবার কিছুর বয়স মাত্র এক বছর। দুবাই গোল্ড স্যুকে মূলত স্বর্ণ, ডায়মন্ড, প্ল্যাটিনাম, ও রুপার গয়না পাওয়া যায়। দুবাই গোল্ড স্যুকের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে তুলনামূলক কম দামে স্বর্ণ পাওয়া যায়। ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম এখানে ৫,৬০০ টাকা।


২০১৮ সালে দুবাই সরকার ক্রয়কৃত সকল পণ্যের ওপর ৫% ভ্যাট বা শুল্ক ধার্য করেছে। কিন্তু ট্যুরিস্টরা দুবাইতে কেনা পণ্যের ওপর ধার্যকৃত ভ্যাট রিফান্ড চাইতে পারবেন। এছাড়াও ছেলেদের জন্য ২০ গ্রাম বা ৫০,০০০ দিরহাম এবং মেয়েদের জন্য ৪০ গ্রাম বা ১,০০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত স্বর্ণের ওপর শুল্ক মাফ করে দেয়া হয়েছে। তাই দুবাই থেকে স্বর্ণ কেনা লাভজনক।


কিভাবে দুবাই যাবেন 




ঢাকা থেকে বিমানে দুবাই যেতে আপনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সংযোগকারী ফ্লাইট নিতে পারেন। এজন্য আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবেঃ


  • ফ্লাইট সার্চ এবং বুক করুন


টিকিটের দাম ক্রয়ের ঋতু এবং সময়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। আপনি যদি আগে থেকে বা অফ-পিক সিজনে বুক করেন তবে দুর্দান্ত ডিল পেতে পারেন। টাকা বাঁচাতে ভ্রমণের অন্তত এক মাস আগে আপনার টিকিট বুক করুন।


ঢাকা থেকে দুবাই ফ্লাইট সার্চ করতে flightexpert.com এ যান। এই রুট অফার করে এমন কিছু এয়ারলাইন্সের মধ্যে রয়েছে এমিরেটস, তুর্কি এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ এবং ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। সার্চ রেজাল্ট অনুযায়ী আপনি আপনার এয়ারলাইন এবং ফ্লাইট বেছে নিন৷  


আপনার পছন্দের ফ্লাইটটি বুক করতে বা যেকোন অনুসন্ধানের জন্য আমাদেরকে +88-09617-111-888 এ কল করুন বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। অথবা আপনি আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি বুক করতে পারেন


সামগ্রিকভাবে, ঢাকা থেকে দুবাই ভ্রমণের দ্রুততম এবং সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হল ফ্লাইং। একটু পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিয়ে আপনি এই ঝলমলে শহরে একটি মসৃণ এবং ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন। 


  • ভিসা নিন


দুবাই ভ্রমণ করার জন্য আপনার একটি বৈধ ভিসার প্রয়োজন হবে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণ পরিষেবার জন্য আমাদেরকে +88-09617-111-888 নম্বরে কল করুন বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 


প্রক্রিয়াটি বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে, তাই আপনার ভ্রমণের আগে ভালভাবে আবেদন করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র ঠিকমতো আছে কিনা নিশ্চিত করুন এবং যাওয়ার আগে দুবাই ভিসা রিকোয়ারমেন্টসগুলো আবার চেক করুন। 


দুবাই গিয়ে কোথায় থাকবেন




দুবাই গিয়ে কোথায় থাকবেন তা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুসারে প্রচুর অপশন রয়েছে। নিম্নে দুবাই এর কিছু জনপ্রিয় বাজেট হোটেল রয়েছেঃ 



আপনি দুবাই তে যেখানেই থাকতে চান না কেন, অবস্থান, বাজেট এবং সুযোগ-সুবিধার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করতে ভুলবেন না। আপনার অপশনগুলো নিয়ে আগে থেকেই গবেষণা করুন এবং বেস্ট হোটেলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে তাড়াতাড়ি হোটেল বুক করুন। 


হোটেল বুকিং এবং অনুসন্ধানের জন্য আমাদেরকে +88-09617-111-888 এ কল করুন বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 


দুবাই যেতে কত খরচ হয়




ঢাকা থেকে দুবাই ভ্রমণ খরচ নির্ভর করবে আপনার ভ্রমণের তারিখ, পছন্দের এয়ারলাইন, হোটেল এবং দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ ফি’র মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর। আপনার বোঝার সুবিধার জন্য এখানে কিছু সাধারণ খরচের একটি ব্রেকডাউন রয়েছেঃ 


  1. ফ্লাইট


ঢাকা থেকে দুবাই পর্যন্ত ফ্লাইটের খরচ বছরের সময় এবং আপনি কত আগে বুক করবেন তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। ঢাকা থেকে দুবাই রাউন্ড-ট্রিপ টিকিটের মূল্য ৬৫,০০০ থেকে শুরু।


  1. হোটেল 


আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে ওয়ার্‌শ'তে থাকার খরচও পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি হোস্টেল এবং গেস্টহাউসের মতো বাজেট-বান্ধব বিকল্পগুলি খুঁজে পেতে পারেন যেখানে প্রতি রাতে প্রায় ৩,০০০ - ৬।০০০ টাকায় রুম পাওয়া যায়। মধ্য-পরিসরের হোটেলগুলোতে প্রতি রাতে প্রায় ৭,০০০-১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। বিলাসবহুল হোটেল এবং অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে প্রতি রাতে ২০,০০০ টাকার বেশি খরচ হতে পারে। 


  1. খাদ্য ও পানীয়


দুবাই এ বাজেটের মধ্যে মানানসই খাবার ও পানীয়ের অনেকগুলো অপশন রয়েছে। আপনি সস্তায় খাওয়ার জন্য স্ট্রিট ফুড এবং স্থানীয় ক্যাফেগুলি খুঁজে নিতে পারেন যেখানে জনপ্রতি প্রায় ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকায় খাবার পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে মধ্য-পরিসরের রেস্তোরাঁয় জনপ্রতি প্রায় ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। ফাইন ডাইনিং এর জন্য জনপ্রতি ৫,০০০ টাকার বেশি খরচ হতে পারে।


  1. পরিবহন


দুবাই এর আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে যার মধ্যে বাস, ট্রাম এবং মেট্রো অন্যতম। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে একটি সিঙ্গেল যাত্রায় প্রায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়, যেখানে ২৪-ঘন্টার পাসের জন্য প্রায় ৬০০ টাকা খরচ হতে পারে। ট্যাক্সি ভাড়া প্রায় তুলনামূলক বেশি এবং দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে বৃদ্ধি পায়। 


সামগ্রিকভাবে, আপনার ভ্রমণ শৈলী এবং পছন্দের ওপর নির্ভর করে ঢাকা থেকে দুবাইতে এক সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের জন্য ২,০০,০০০ থেকে ৩,৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি খরচ হতে পারে। আপনার উচিত অপশনগুলো আগে থেকেই গবেষণা করে একটি বাজেট তৈরি করা যাতে আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে সহজ হয়। 


শেষ কথা


এই ছিলো আমাদের দুবাই ভ্রমণ গাইড। আশা করি গাইডটি আপনার কাজে আসবে। ঢাকা টু দুবাই বিমান ভাড়া কত বা দুবাই ট্যুরিস্ট ভিসার প্রসেসিং সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন


এই ব্লগটি ভালো লাগলে আমাদের অন্য ব্লগ গুলোও পড়ে দেখতে পারেন।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :