জয়পুর ভ্রমণ

ঘুরে আসুন পিংক সিটি খ্যাত জয়পুর | কোথায় যাবেন, কেমন খরচ ও অন্যান্য

জয়পুর হল ভারতের প্রখ্যাত রাজস্থান প্রদেশের রাজধানী এবং সবচাইতে বড় শহর। সপ্তদশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা এই শহরটি ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমের এর শাসক দ্বিতীয় জয় সিংহ এই শহরটি স্থাপন করেন। এর আগে জয় সিংহ মুঘলদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুঘলদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে জয় সিংহ রাজধানী স্থানান্তর করেন। ফলস্বরূপ ১৭২৭ সালে জয়পুর এর জন্ম হয়। তিনি বিদ্যাধর ভট্টাচার্য নামক একজন বিখ্যাত বাঙালি স্থপতিকে দায়িত্ব দেন এই নগরের নকশা করার। তাঁর নিরলস পরিশ্রমে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে পিঙ্ক সিটি খ্যাত জয়পুর।

দিল্লি থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জয়পুর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানে দুইটি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট আছে, যেগুলো হল জন্তর মন্তর এবং অ্যামের (আম্বর) দুর্গ প্রাসাদ।

কখন যাবেন জয়পুর

কোথাও যাবার আগে সেখানকার আবহাওয়ার আগাম খবর নিয়ে যাওয়া ভাল। জয়পুরের আবহাওয়া বেশ উষ্ণই বলা চলে। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে গেলে অনেক ভাল একটা পরিবেশ পাবেন। তখন তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। জয়পুরের শীতকালও অনেক চমৎকার। এখানে শীতকাল শুরু হয় নভেম্বর থেকে আর শেষ হয় ফেব্রুয়ারিতে। এই সময়ের মধ্যে গেলে আপনি বেশ কিছু  উৎসবেও অংশ নিতে পারবেন।  যেমন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভাল বা সাহিত্য সম্মেলন। মার্চে পাবেন জয়পুরের বিখ্যাত হাতি উৎসব বা এলিফেন্ট ফেস্টিভাল।

কিভাবে যাবেন জয়পুর

জয়পুর যেতে হলে প্রথমেই আপনার পাসপোর্ট লাগবে। পাসপোর্ট করার নিয়মকানুন সবাই কমবেশী জানেন। 

এর পর আপনার যে জিনিসটি লাগবে সেটা হল ভারতের ভিসা। কোন রকম ঝামেলা ছাড়া ভারতের ভিসা করার নিয়মাবলী জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুনঃ দালালের সাহায্য ছাড়া ইন্ডিয়ান ভিসা কিভাবে করবেন

আপনি ইচ্ছা করলে সড়ক বা বিমান পথ যেকোন একটা ব্যাবহার করতে পারে। যদি একটু আরামে এবং দ্রুত পৌছাতে চান তাহলে আকাশ পথে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে দিল্লির টিকিট কাটতে হবে। ভাড়া বিভিন্নও বিমানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এয়ার ইন্ডিয়া বা স্পাইস জেটে গেলে সেক্ষেত্রে দশ থেকে তের হাজার টাকার মধ্যে টিকিট করতে পারবেন। দিল্লি থেকে আপনি আকাশ পথ অথবা সড়ক পথে জয়পুর যেতে পারেন। দিল্লি থেকে প্রতিদিন জয়পুরের উদ্দেশে ১৩ টি ফ্লাইট ছাড়ে। সময় লাগে ১ ঘণ্টার কিছু বেশী।

বিমানের টিকিট খুব সহজেই এই ওয়েব সাইট থেকে করতে পারেনঃ https://www.flightexpert.com/

বিমান টিকিট করতে কল করুন এই নম্বরেঃ +৮৮০ ৯৬১৭ ১১১ ৮৮৮ অথবা ০১৮৪৭-২৯১-৩৮৮ অথবা ভিজিট করুনঃ www.flightexpert.com

টিকিট এর দাম ইউ এস ডলার অথবা বাংলা টাকায় পরিশোধ করতে পারেন।

সড়ক পথে গেলে ঢাকা থেকে বাস যোগে কলকাতা যাবেন। সেখান থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে দিল্লি। দিল্লি থেকে ট্রেন অথবা ট্যাক্সি তে করে জয়পুর যাওয়া যাবে।

কোথায় ঘুরবেন

জয়পুর এ অনেক চমৎকার কিছু জায়গা আছে যেখানে ঘুরে আপনি বর্ণিল অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। জয়পুর প্রধানত দুই ভাগে বিভক্তঃ পুরনো শহর আর নতুন শহর।

জয়পুরের পুরনো অংশ কে পিংক সিটি বলা হয়ে থাকে। জয়পুরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই এলাকাটি সপ্তাদশ ও অষ্টাদশ শতকের স্থাপনা দ্বারা পরিপূর্ণ। এখানে বেশ কিছুদিন না থাকলে সব কিছু দেখে শেষ করতে পারবেন না। জয়পুরের নতুন অংশটিও একেবারে কম পুরনো নয়। উনবিংশ শতাব্দিতে রাজা রাম সিংহ শহর বর্ধনের পরিকল্পনা হাতে নেন। নতুন অংশে নাগরিকদের সুবিধার জন্য উন্নত পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা, ডাক ব্যাবস্থা ইত্যাদি চালু করেন রাজা রাম সিংহ। এখানকার প্রাসাদ গুলোতে ইউরোপীয় ছাপ সুস্পষ্ট।

জয়পুর ঘুরে দেখার জন্যও পাবেন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অ্যাম্বার দুর্গ, সেন্ট্রাল মিউজিয়াম, বৃহত্তম পাথুরে মান মন্দির জন্তর মন্তর, হাওয়া মহল ইত্যাদি। এগুলো ঘুরে দেখার জন্য প্যাকেজ টিকেট কিনে নিতে পারেন, তাতে খরচ কিছুটা বাঁচবে।

সিটি প্যালেস

১৯ শতকে রাজা জয় সিংহ এই চমৎকার প্রাসাদটি নির্মাণ করান। এর নির্মাণ কৌশলে রয়েছে মুঘল, রাজপুত এবং ইউরোপীয় ছাপ। এখানকার প্রাসাদের পাশাপাশি আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে। সেটা হল রুপার তৈরি বিশাল বিশাল পানি রাখার পাত্র। এদের বলা হয় গঙ্গাজলী। প্রতিটি পাত্রের উচ্চতা ১.৬ মিটার। মহারাজা দ্বিতীয় মধু সিংহ এগুলা তৈরি করেন যেন তিনি সপ্তম এডওয়ার্ডের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাবার সময় গোসলের জন্যও গঙ্গা জল নিয়ে যেতে পারেন। প্রতি পাত্রের ধারন ক্ষমতা ৪০০০ লিটার।

হাওয়া মহল

সিটি প্যালেসের পাশেই পাবেন নয়নাভিরাম হাওয়া মহল। ১৭৯৯ সালে মহারাজা প্রতাপ সিংহ এই মহলটি বিশেষ ভাবে তৈরির নির্দেশ দেন। হাওয়া মহল মুলত তৈরি করা হয় যেন রাজপরিবারের মহিলারা সাধারন মানুষের নজর এড়িয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি উপভোগ করতে পারেন। মহিলাদের সুবিধার্থে হাওয়া মহলে সংযুক্ত করা হয় ৯০০ টি জানালা।

জন্তর মন্তর মান মন্দির

জন্তর মন্তরকে বলা হয় পৃথিবীর বৃহত্তম পাথরের তৈরি মান মন্দির। ১৭৩৮ সালে এটি তৈরি করেন মহারাজ জয় সিংহ। তিনি নিজেই ছিলেন একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠে এই জন্তর মন্তর মানমন্দির। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এবং জ্যোতির্বিদ্যায় উৎসাহী মানুষজন এই বিখ্যাত মান মন্দির দেখতে আসেন।

আলবার্ট হল মিউজিয়াম

এটি রাজস্থানের সবচাইতে পুরনো যাদুঘর। রাম নিবাস উদ্যানের ভিতরে এর অবস্থান। ১৮৭৬ সালে ওয়েলসের প্রিন্স অ্যালবার্ট এডওয়ার্ড এই যাদুঘরের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারেই এর নাম করন করা হয়। এর চমৎকার স্থাপত্যশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এখানে দেখতে পাবেন অনেক ঐতিহ্যবাহী চিত্রকর্ম, প্রাচীন অস্ত্র, ধাতব বাসন ও কাঠের তৈজস পত্র।

আম্বর দুর্গ

জয়পুরে আপনি অনেক দুর্গ দেখতে পাবেন। দুর্গ গুলোয় ঘুরতে গিয়ে আপনার নিজেকে সপ্তদশ শতাব্দীতে হারিয়ে ফেলতে পারেন। দুর্গ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বিখ্যাত হল আম্বর দুর্গ। মাওতা হ্রদের পাশে অবস্থিত এই দুর্গ রাজপুত স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম চমৎকার একটি নিদর্শন। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা মান সিংহ এই বিখ্যাত দুর্গ স্থাপন করেন। এখানে দেখার মত পাবেন যেমন দেওয়ান-ই-খাস এর চমৎকার কারুকাজ, সুখ নিবাস এর সুক্ষ চন্দন কাঠের কাজ অথবা কাঁচের কারুকাজ বিশিষ্ট শিষ মহল। তবে হাতীর পিঠে চড়ে ঘোরা ব্যাতিত আম্বর দুর্গ ভ্রমণ অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। সে ব্যাবস্থাও আছে। তবে সে জন্যে আপনাকে দুর্গে যেতে হবে ভোরবেলা।

এছাড়া জয়পুরে পাবেন ছোট বড় অসংখ্য মন্দির ও দুর্গ আছে যেগুলোর বর্ণনা দিয়ে শেষ করা মুশকিল। এর মধ্যে আছে জয়গড় দুর্গ, নহগড় দুর্গ, কনক বৃন্দাবন, বিড়লা মন্দির, গবিন্দ দেবজী মন্দির, গল তাজি মন্দির, জগত শিরোমণি মন্দির এবং আরও অন্যান্য। আসলে জয়পুর দেখতে যাওয়া মানে প্রায় গোটা শহরকেই দেখে ফেলা, কারন শহরের আনাচে কানাচে এত দর্শনিয় কিছু ছড়িয়ে আছে যে সেগুলো ভালভাবে না দেখে আপনার মন ঘরে ফিরতে চাইবেই না। এজন্য জয়পুর যাবার সময় অবশ্যই বেশ কিছুটা সময় হাতে নিয়ে বের হলে ভাল করবেন।

জয়পুরে কি খাবেন

ঘুরে বেরাবেন আর খাবেন না তাই কি করে হয়? নতুন জায়গা মানেই নতুন খাবার এবং সেই খাবারের স্বাদ নেয়ার অভিজ্ঞতা। আসুন জেনে নেই জয়পুর কি কি রসনা নিয়ে অপেক্ষা করছে।

ভারতের বেশিরভাগ এলাকাতেই মসলা প্রধান খাবার বেশ জনপ্রিয়। জয়পুরও এর ব্যাতিক্রম নয়। এখানকার খাবারের মধ্যে রাজপুত ও মুঘল রন্ধন প্রনালির বেশ প্রভাব লক্ষ করা যায়। এখানকার কিছু বিখ্যাত খাবার হল ডাল কচুরি, টিকি, বেজাত রুটি, কিমা বাটি, চুরমা, লাল মাস, মিরচো বাদাস, জঙ্গলি মাস, পনীর আফতাব, সুলা বিরিয়ানি ইত্যাদি। এছাড়া রাজস্থানি স্টাইলে রান্না করা আমাদের পরিচিত যেমন মুরগি, খাসি এবং মাছের তরকারী তো থাকছেই। আরও আছে বিভিন্ন ধরনের ও স্বাদের বড়া। এছাড়া বিভিন্ন স্বাদের চা ও মণ্ডা মিঠাই তো আছেই।

এসব খাবারের স্বাদ আপনাকে পৌঁছে দিতে এখানে আছে অনেক নামকরা রেস্তোরাঁ। এরকম কয়েকটি ভাল রেস্তরার নাম ও ঠিকানা দিয়ে দিলাম যেন আপনারা সহজেই খুজে বের করতে পারেনঃ

  • রাবত মিষ্ঠান্ন ভান্ডার – ঠিকানাঃ পোলোভিক্টরি সিনেমার উল্টো দিকে, স্টেশন রোড, সিদ্ধি ক্যাম্প।

  • 1135 এডি – ঠিকানাঃ লেভেল 2, জালেব চক, শীলা মাতা মন্দিরের কাছে।

  • তাপরি সেন্ট্রাল – ঠিকানাঃ B4 E, থার্ড ফ্লোর, সুরানা জুয়েলার্স, সেন্ট্রাল পার্কের বিপরীতে, পৃথিবীরাজ রোড।

  • স্পাইস কোর্ট – ঠিকানাঃ হারি ভবন, আচরোল হাউস, জেকব রোড, সিভিল লাইনস।

কোথায় থাকবেন

জয়পুর ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই থাকার কথা মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু জয়পুরে ঘোরার মত অনেক জায়গা, সেহেতু কিছুদিন থেকে সব ঘুরে দেখতে পারলে সব চেয়ে ভাল হয়। যদি আত্মীয় স্বজন অথবা বন্ধু বান্ধব না থাকে সেক্ষেত্রে আপনাকে হোটেলই খুজতে হবে। তাই আমরা আপনার সাহায্যার্থে কিছু আন্তর্জাতিক হোটেলের নাম দিয়ে দিলাম।

জয়পুরের কিছু আন্তর্জাতিক আবাসিক হোটেল এর নামঃ
আই সি টি রাজপুতনা

  • দি ললিত হোটেল
  • রামবাগ প্যালেস
  • রয়্যাল হেরিটেজ হ্যাভেলি
  • ভেস্তা ইন্টারন্যাশনাল
  • জয়পুর ম্যারিয়ট হোটেল
  • হলিডে ইন
  • র‍্যাডিসন ব্লু
  • হোটেল সরং প্যালেস

জয়পুর এ সাশ্রয়ে মানসম্মত হোটেল বুক করতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই নম্বরেঃ +৮৮০ ৯৬১৭ ১১১ ৮৮৮ অথবা ০১৮৪৭-২৯১-৩৮৮ অথবা ভিজিট করুনঃ www.flightexpert.com


আশা করব এই ব্লগ টি আপনাকে কিছুটা হলেও তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছে। আপনার সামান্য উপকার হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আপানদের কোন জিজ্ঞাস্য বা সমস্যা থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথবা আমাদের কল দিতে পারেন। পরিশেষে আপনাদের সবার শুভ ও নিরাপদ যাত্রা কামনা করছি।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :