ঢাকা রাজশাহী বিমান ভ্রমণ

ঢাকা রাজশাহী বিমান ভ্রমণ । বিমান ভাড়া, টিকিট, ফ্লাইট সহ সব তথ্য

রাজশাহী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বিভাগীয় শহর। পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত রাজশাহী বেশ প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। রাজশাহীর রেশমি পোশাক, আম, লিচু ও মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য বাংলাদেশের সবার কাছেই অনেক জনপ্রিয়। এছাড়া শিক্ষানগরী হিসেবেও রাজশাহীর বেশ খ্যাতি আছে। এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ সহ আরও নামকরা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন কারনেই ঢাকা রাজশাহী রুট বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাস্ত একটি রুট।


বিভাগীয় শহর হিসেবে রাজশাহীর গুরুত্ব অনেক বেশী। ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহেই অনেক মানুষ রাজশাহী যাওয়া আসা করে থাকেন। ঢাকা রাজশাহী রুটে বাস ট্রেন দুইই আছে এবং তাদের সার্ভিসও বেশ ভাল। তবে যারা আরও দ্রুত ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যে আছে আকাশ পথ। ঢাকা রাজশাহী রুটে যারা আকাশ পথে যাতায়াত করেন বা করতে চান, তাদের জন্যেই মুলত আমাদের আজকের লেখা। তবে বিমানপথের ব্যাপার গুলো নিয়ে আলোচনা করার আগে সড়কপথ এবং রেলপথের অবস্থা একটু দেখে নেয়া যাক।


ঢাকা রাজশাহী রুটের দূরত্ব এবং সময় – সড়ক পথ

ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবার অন্যতম প্রধান উপায় হল বাস। বাসে গেলে আপনাকে প্রায় ২৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। এক্ষেত্রে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মত। বাসগুলো টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে যায়। কোন বিশেষ কারণে (যেমন ঈদ, পুজা) যদি ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে ঢাকা রাজশাহীর ভ্রমন সময় বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ১০-১২ ঘণ্টা বা তারও কিছু বেশী।


ঢাকা রাজশাহী রুটের দূরত্ব এবং সময় – রেলপথ

ট্রেনেও করতে পারেন ঢাকা রাজশাহী ভ্রমণ। এক্ষেত্রে আপনাকে ২৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। সময় লাগবে ৬ – ৭ ঘণ্টা। ট্রেনে আপনাকে ট্রাফিক জ্যামের সম্মুখিন হতে হবে না। তবে ঈশ্বরদী জংশনে একটা ক্রসিং হয়। সেই ক্রসিং এ অনেক সময় লম্বা সময় লেগে যায়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়।


ঢাকা রাজশাহী দূরত্ব এবং সময় – আকাশপথ

আকাশপথে ভ্রমণ আর আগের মত আকাশকুসুম কোন কল্পনা নয়। বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি দেশে এখন আরও বেশ ব্যাক্তি মালিকানাধীন বিমান সংস্থা তাদের ব্যাবসা পরিচালনা করছে। তাদের বিমানগুলোও বেশ চমৎকার, নিরাপদ ও আরামদায়ক।


স্বাভাবিকভাবেই আকাশপথে ঢাকা রাজশাহী ভ্রমণ হবে অনেক সংক্ষিপ্ত এবং ঝামেলা বিহীন। আকাশ পথের হিসেবে এক্ষেত্রে আপনাকে সর্বচ্চ ১৯৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। সবচাইতে চমৎকার ব্যাপার হল এজন্য আপনার সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট থেকে সর্বচ্চ ৫৫ মিনিট মাত্র। ঢাকা রাজশাহী রুটের বিমানগুলো ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়ন করবে এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমান বন্দরে অবতরণ করবে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই!


ঢাকা রাজশাহী রুটের বিমান সংস্থা বা এয়ারলাইন্স

ঢাকা রাজশাহী বিমান পথে যাত্রীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। এর প্রধান কারন ছিল রাজশাহীকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন সরকার রংপুর এবং বগুড়ার উন্নয়ন সাধনে মনোযোগী হন। একারণে এখানে একসময় বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তথা কলকারখানার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কমই ছিল বলা যায়। সাধারণ মানুষ বাস আর ট্রেনকেই বেছে নিতেন। আর অনেকে ব্যাক্তিগত গাড়ি ব্যাবহার করতেন।

তবে সময় বদলেছে এখন। বর্তমান সরকার রাজশাহীর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন ফলে বড় ব্যাবসায়িরা রাজশাহিতে তাদের ব্যাবসা প্রসারন করছেন। এজন্য গত কয়েকবছরে রাজশাহীর বেশ উন্নয়ন হয়েছে।


মানুষ এখন সময়ের মূল্য বেশী দিতে চায়। কারন সময় মানেই আরও বেশী সম্ভাবনা ও সুযোগ। তাই অনেক সচেতন মানুষই এখন ৭-৮ ঘণ্টার সড়ক পথের ঝামেলায় না গিয়ে কিছু খরচ বেশী হলেও ৪৫-৫৫ মিনিটে ঢাকা রাজশাহী ভ্রমণ শেষ করার পক্ষপাতী।


ঢাকা রাজশাহী রুটে যেসব বিমান সংস্থা সার্ভিস দিয়ে থাকে তারা হলঃ

  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
  • নভোএয়ার
  • ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স

এর মধ্যে শুধু নভোএয়ার এবং ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহের প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ বিমান শুধু রবি, সোম, মঙ্গল ও শুক্রবারে ফ্লাইট পরিচালনা করে। শুধুমাত্র এই দিন গুলোতে ঢাকা রাজশাহী রুটে ৩ টি করে ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বাকি দিন গুলোতে ২টি করে ফ্লাইট পরিচালিত হয়।


ঢাকা রাজশাহী রুটের ফ্লাইট সমূহ

ঢাকা রাজশাহী রুটে এই তিনটি বিমান সংস্থা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন সময়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।


আপনাদের সহজে বোঝার সুবিধার্থে এ নিয়ে একটি টেবিল** তৈরি করলামঃ

ঢাকা রাজশাহী রুটের সাপ্তাহিক ফ্লাইটের হিসাব


**বিঃদ্রঃ ফ্লাইট সংখ্যা এবং অন্যান্য তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। বিমান রুটিন যেকোন সময় পরিবর্তনশীল হতে পারে। সেক্ষেত্রে সমস্ত দায় দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার। যেকোন জরুরী অবস্থা যেমন খারাপ আবহাওয়া অথবা রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে সেক্ষেত্রে বিমান সংস্থার তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে ফ্লাইট সংখ্যার পরিবর্তন হতে পারে। এর জন্য ফ্লাইট এক্সপার্ট কোন ভাবেই দায়ী না।


ঢাকা রাজশাহী রুটের বিমান ভাড়া

বিমান ভাড়া সম্পর্কে মানুষের এখনো অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকের ধারণা যে আকাশ পথে ভ্রমণ কেবল মাত্র উচ্চবিত্তের ব্যাপার, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের খুব একটা সুযোগ নেই এখানে। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তা না। যাত্রীদের আকাশপথে ভ্রমণে উৎসাহিত করার জন্যে বিভিন্ন বিমান সংস্থা এখন বিমান ভাড়া অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। এছাড়া ফ্লাইট এক্সপার্টের মত অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বিভিন্ন সময় আরও বাড়তি ডিসকাউন্টও দিচ্ছে।


বিমান ভাড়া সর্বদাই পরিবর্তনশীল। ভ্রমণের তারিখ অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা কমে যায় অথবা বেড়ে যায়। তবে পার্থক্যটা সাধারণত খুব বেশী হয় না।


তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বিমান ভাড়া সম্পর্কে আপনারা যেন একটা ধারণা পান। এই তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।


বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিভিন্ন রকম বিমান ভাড়া আছে। সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্লাস বা শ্রেণি বিন্যাস করে থাকে। ক্লাস ভেদে ভাড়া বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এখানে আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি বিমান সংস্থার সর্বচ্চ এবং সর্বনিম্ন ভাড়ার তালিকা** তৈরি করতে।


** তালিকাটি পরিবর্তিত হতে পারে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আমরা তালিকাটি তৈরি করেছি ঢাকা রাজশাহী রুটের বিমান ভাড়া সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের একটি সম্যক ধারানা দেবার জন্য।


কিভাবে ঢাকা রাজশাহী বিমান টিকিট করবেন

আভ্যান্তরিন বিমান ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। তাই বিমান ভ্রমণের আলাদা কোন ঝামেলা নেই বললেই চলে। নিরাপত্তার খাতিরে শুধু আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রটি হলেই চলবে।


টিকিট করতে পারবেন আপনার পছন্দের বিমান সংস্থার অফিস অথবা ওয়েবসাইট থেকে। অগ্রিম টিকিট করাটা বেশী সুবিধাজনক। ভাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পেতে পারেন। এছাড়া পছন্দসই আসনও বেছে নিতে পারবেন। এছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি থেকেও টিকিট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আরও কিছু এক্সট্রা ডিসকাউণ্ট পেলেও পেতে পারেন। বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি গুলোর মধ্যে ফ্লাইট এক্সপার্ট বেশ স্বনামধন্য। এদের ওয়েবসাইট ঠিকানাঃ https://www.flightexpert.com/

এছাড়া এরা ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরেঃ ০৯৬১৭-১১১-৮৮৮


লাগেজ সংক্রান্ত তথ্য

নিয়ম অনুযায়ী ইকোনমি যাত্রীরা প্রত্যেকে ২০ কেজি পরিমান চেক কৃত মালামাল বহন করতে পারবেন। তাছাড়া কেবিন লাগেজ হিসেবে  ৭ কেজি মাল বহন করা যাবে। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা ৩০ কেজি চেক কৃত মালামাল এবং ৭ কেজি কেবিন লাগেজ বহন করতে পারবেন। এর চাইতে বেশী লাগেজ পরিবহন করতে চাইলে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। এই ফি সম্পর্কে জানার জন্যে আপনার নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করুন। বিমানে মালামাল পরিবহনের সিমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে চাইলে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেনঃ https://www.flightexpert.com/blog/baggage-rules-for-air-travelers


পরিশেষে আপনার নিরাপদ রাজশাহী ভ্রমণ কামনা করছি। আপনার কোন সমস্যা বা জিজ্ঞাস্য থাকলে আমাদের ব্লগে অথবা ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করার।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :