সপরিবারে ইস্তাম্বুল ভ্রমণঃ বসফরাসের দুই প্রান্তে এক ঐতিহাসিক নগরী

তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুল দেশটির জন্য অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক, ও সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আয়তনে পৃথিবীর ১৫তম বৃহত্তম শহর।  এখানে বাস করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। দুই মহাদেশের মাঝখানে অবস্থিত এই  শহরটি ইউরোপের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়া ইউনেস্কো এটিকে “বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান” হিসেবে ঘোষণা করেছে। 


শহরটির প্রধান আয়ের উৎস ট্যুরিজম। এর মনোরম সৌন্দর্য ও অনন্য সুন্দর স্থাপনাগুলোর টানে প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ ছুটে আসে ইস্তাম্বুল ভ্রমণ করতে। ২০২১ সালে ট্যুরিজম থেকে ইস্তাম্বুলের আয় ছিলো প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার।  


সপরিবারে ভ্রমন করার জন্য ইস্তাম্বুল আদর্শ জায়গা। ইস্তাম্বুলের প্রধাণ আকর্ষণ এর ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদ, সুলায়মান মসজিদ, নীল মসজিদ, তোপকাপি প্রাসাদ মিউজিয়াম, গালাটা টাওয়ার, গ্র্যান্ড বাজার, ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন, আর্কিওলজি মিউজিয়াম, হিপোড্রোম, বসফরাস স্ট্রেইট ইত্যাদি। 


এই আর্টিকেলটিতে আমরা ইস্তাম্বুলের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। সেই সাথে চেষ্টা করবো কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে যা সপরিবারে ইস্তাম্বুল ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনার কাজে আসবে। 


ইস্তাম্বুল ভ্রমণঃ ইস্তাম্বুলের ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থান   


সুলতান সুলেমান, হুররাম সুলতানদের সাম্রাজ্য ইস্তাম্বুল পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। এর উজ্জ্বল ইতিহাস সবার মনে সাড়া জাগানোর মতো। একটি দুটি নয়, ইস্তাম্বুল ৩টি সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলো। রোমান, বাইজেন্টাইনঅটোমান- এই ৩টি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুল এর পূর্ব নাম ছিলো যথাক্রমে বাইজেন্টিয়াম ও কনস্ট্যান্টিনোপল।


তাই ইস্তাম্বুলে এলে ভ্রমণবিলাসীরা দেখতে পান এই তিনটি সাম্রাজ্যের কিছু অসাধারণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। পুরো ইস্তাম্বুলে জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সম্রাট সুলেমান, মুহমেদ, আহমেদ ও অন্যান্য সম্রাটদের তৈরি অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত অসংখ্য স্থাপনা। স্থাপত্যশৈলীর ইতিহাসে এখনো শীর্ষে রয়েছে ইস্তাম্বুল। 


ইস্তাম্বুল পৃথিবীর একমাত্র শহর যা দুটি মহাদেশ নিয়ে বিস্তৃত। দুটি মহাদেশ হচ্ছে ইউরোপএশিয়া। এদের আলাদা করেছে বসফরাস প্রণালি। এটি কৃষ্ণ সাগরমর্মর সাগরকে মিলিত করেছে। বসফরাস প্রণালির দুই পাশ জুড়ে অবস্থিত একদা বিশ্ব শাসনের কেন্দ্রস্থল ইস্তাম্বুল শহর। 


ইস্তাম্বুল ভ্রমণঃ ইস্তাম্বুলের দর্শনীয় স্থানসমূহ


তো এখন আসি ইস্তাম্বুল কেন বিখ্যাত এই প্রসঙ্গে। ইস্তাম্বুলে রয়েছে কিছু পৃথিবী বিখ্যাত স্থাপত্য। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রধান স্থাপত্যবিদ মিমার সিনান ছিলেন বিশ্বের প্রথম সারির একজন স্থাপত্যবিদ। তার তৈরি সুলেমান মসজিদ, তোপকাপি প্রাসাদ ইস্তাম্বুলের অন্যতম বিখ্যাত স্থাপনা। 


রোমানরা তৈরি করে গিয়েছে ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন, দ্যা হিপোড্রোম ইত্যাদি। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সময় তৈরি বিখ্যাত স্থাপনা আয়া সোফিয়া,  নীল মসজিদ, ইত্যাদি।


নীচে ইস্তাম্বুল গিয়ে সপরিবারে দেখে আসার মতো কিছু বিখ্যাত স্থানের বর্ণনা দেয়া হলোঃ


  • আয়া সোফিয়া



সুলতানাহমেত এলাকায় অবস্থিত আয়া সোফিয়া ইস্তাম্বুলের শ্রেষ্ঠ স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি।  ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ানের আদেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো যা ছিলো খ্রিষ্টধর্মের অন্যতম প্রধান উপাসনালয়। 


পরে কনস্ট্যানটিনোপল জয়ের পর অটোমান সাম্রাজ্যের বাদশাহ মেহমেদ একে মসজিদে রুপান্তর করার আদেশ দেন। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় স্থাপনাটি মসজিদ হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিতে মিউজিয়ামে রুপান্তর করেন।


২০২০ সালে একটি বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে রুপান্তর করার ঘোষণা দেয়া হয়। তারপর থেকে এটি মসজিদ হিসেবেই আছে। এর অপরুপ স্থাপত্যশৈলী দুনিয়াব্যাপী শিল্পবোদ্ধাদের মন জয় করেছে। নীল মসজিদসহ ইস্তাম্বুলের অনেক বিখ্যাত স্থাপত্য আয়া সোফিয়া থেকে অনুপ্রাণিত। 


আয়া সোফিয়ার নকশায় ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম দুটোরই নিদর্শন রয়েছে। এর মিনার ও আরবী দেয়াললিখনে রয়েছে ইসলামের নিদর্শন আর এর সুন্দর টাইলস ও মোজাইকে রয়েছে খ্রিস্টধর্মের নিদর্শন। তাই আয়া সোফিয়া শুধুমাত্র উপাসনালয়ই নয়, বরং দুটি ধর্মের সেতুববন্ধন হিসেবেও কাজ করে।


  • সুলায়মানি মসজিদ



বাইজেন্টিয়ান স্থাপত্য আয়া সোফিয়াকে টক্কর দিতে অটোমান সম্রাট সুলাইমানের আদেশে সম্রাটের প্রধান স্থপতি মিমার সিনান নির্মান করেন অটোমান সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন সুলায়মানি মসজিদ। এটির নির্মাণ ১৫৫০ সালে শুরু ও ১৫৫৭ সালে শেষ হয়ে উদ্বোধন হয়।


মিমার সিনান ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্থপতি এবং তিনিই নির্মাণ করেন ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এটি দীর্ঘ ৪৬২ বছর ধরে ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ ছিলো। থার্ড হিলে অবস্থিত মসজিদটি স্থাপত্যশিল্পের এক অপূর্ব উদাহরণ। এর বিশাল গম্বুজ ও মিনারগুলো আসলেই অসাধারণ।


সিনান আয়া সোফিয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাইজেন্টাইন ডিজাইনের আদলে সুলায়মানি মসজিদের নকশা করেন। সুলায়মানি মসজিদে ইজনিক টাইলসের পরিমিত ব্যবহার হয়েছে। মসজিদের ভেতরটা প্রায় বর্গক্ষেত্র আকৃতির। মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতর একটি মাদরাসা, হসপিটাল, স্কুল, হাম্মাম, ধর্মশালা ও জনসাধারণের জন্য রান্নাঘর রয়েছে।


  • তোপকাপি প্রাসাদ মিউজিয়াম



তোপকাপি প্রাসাদ সম্রাট মুহাম্মদ ফাতিহ এর সময় প্রতিষ্ঠিত একটি অদ্ভূত সুন্দর স্থাপত্যশিল্প যা অটোমান সাম্রাজ্যের  একটি অন্যতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। প্রাসাদটিতে সম্রাট তার মা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও কর্মচারীদের নিয়ে থাকতেন। তাই প্রাসাদটি অত্যন্ত সুন্দর ও পরিকল্পিতভাবে সম্রাট ও তার পরিবারের সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়।


তোপকাপি প্রাসাদ একটি আশ্চর্যরকম সুন্দর প্রাসাদ। প্রাসাদটি তৈরি করতে সবচেয়ে দামী ও সুন্দর ভবন তৈরির সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিখ্যাত ইজনিক টাইলসে তৈরি দেয়াল ও মেঝের আবেদন এত বছর পরেও একটুও কমেনি। বরং দিন দিন পর্যটকরা এই প্রাসাদ নির্মাণকারীদের দূরদর্শীতা ও পরিকল্পনার মর্ম আরো বেশি করে উপলব্ধি করছে। 


বিশাল এই প্রাসাদে মোট ৪টি চত্তর বা আঙ্গিনা রয়েছে। সবচেয়ে বড় চত্তরটির নাম হারেম যেখানে থাকতেন প্রাসাদের মহিলারা। তোপকাপি প্রাসাদে রয়েছে কয়েকশো ঘর- একটি বিশাল দরবার ঘর, অনেকগুলো বড় বড় গোসলখানা, সুলতানের মা এর শোবার বড় ঘর, উপপত্নীদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর, একটি পোর্ট্রেট রুম, মসজিদ, একটি হাসপাতাল, কয়েকটি বেকারি বা রুটিঘর এবং একটি টাঁকশাল ছাড়াও আরো অনেক কিছু। এক সময় এই প্রাসাদে একসাথে ৪,০০০ মানুষ অবস্থান করতো।


প্রাসাদের বাউন্ডারির মধ্যেই গুলহেন পার্ক রয়েছে যা প্রাসাদের সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। প্রাসাদ থেকে বের হয়ে গুলহেন পার্ক ও ঘুরে আসতে পারেন।


  • ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন



আয়া সোফিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন। এটি মাটির নীচে ইস্তাম্বুলের হাজারো জলাধারের মধ্যে একটি। বাইজেন্টাইন স্থাপত্যবিদ্যার একটি অন্যতম আশ্চর্য এই সিস্টার্ন। এটি পর্যটকদের কাছে ইস্তাম্বুলের একটি অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।


ব্যাসিলিকা সিস্টার্নের ধারণক্ষমতা প্রায় ১০,০০০ টন। এটি ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় জলাধারগুলোর একটি। মাটির নিচের এই জলাধারটির নকশা অত্যন্ত সুন্দর। এর থামগুলোতে নানানরকম নকশা করা। দুটি থামের গোড়ায় গ্রীক মাইথলজির মেডুসার মাথা রয়েছে যা কিনা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া একটি থামের নাম “হেনস আই” যাতে কান্নার মোটিফ আছে। 


সিস্টার্নের ভেতর পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যাবস্থা রয়েছে। পুনরুদ্ধারের কাজের জন্য আপাতত ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন বন্ধ রয়েছে।


  • দ্যা হিপোড্রোম



দ্যা হিপোড্রোম বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম নিদর্শন। হিপোড্রোম গঠনের কাজ শুরু করেন সেপ্টিমাস সেভেরাস আর শেষ করেন কনস্টানটিনোপল। এটি মূলত ৬০,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্টেডিয়াম ছিলো যেখানে ঘোড় দৌড় ও রথের প্রতিযোগীতা হতো।  


ধীরে ধীরে এটি জনসাধারণের মিলনস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে। এখানে ঘোড়ার গাড়ির রেসের পাশাপাশি রাজকীয় অনুষ্ঠান, সামরিক বিজয়, রাজনৈতিক মিছিল থেকে শুরু করে প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড হতে দেখা যায়। 


কালের বিবর্তনে হিপোড্রোমে এখন শুধু একটি লম্বা পিলার, ব্রোঞ্জের তৈরি ওরাকল ডেলফির বিখ্যাত সারপেন্ট কলাম, ও ইজিপশিয়ান ওবেলিস্কটি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।  


সুলতানাহমেত এলাকায় অবস্থিত হিপোড্রোমের মূল আকর্ষণ এর বড় পিলারটি যেটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। আয়া সোফিয়া থেকে হিপোড্রোম হাঁটা পথের দূরত্ব। তাই আয়া সোফিয়া ভ্রমণ শেষে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহাসিক হিপোড্রোমে। এখানে ঘোরার জন্য কোন টিকেট লাগে না। 


  • নীল মসজিদ



আয়া সোফিয়ার কাছেই নীল মসজিদ। এটিকে সুলতান আহমেদ মসজিদ ও বলা হয়। সুলতান আহমেদ এর আদেশে ১৬০৯ সালে মসজিদটি বানানো শুরু হয় আর শেষ হয় ১৬১৬ সালে। নীল মসজিদ নামটি এটি তৈরিতে ব্যবহৃত হাজার হাজার ইজনিক টাইলস থেকে এসেছে। মসজিদটি অটোমান সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম স্থাপত্য। 


মসজিদটি তৈরি হওয়ার পর এটি ৬টি মিনারের কারণে মুসলিম বিশ্বে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। সবাই একে মক্কার পবিত্র মসজিদ-আল-হারাম এর সাথে তুলনা করা শুরু করে যা কিনা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাই সমালোচনা বন্ধ করার জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষ একটি ৭ম মিনার মসজিদ-উল-হারাম কে উপহার স্বরুপ প্রেরণ করে।  


মসজিদ চত্বরে সুলতান আহমেদ এর সমাধি, একটি মাদরাসা ও একটি ধর্মশালা রয়েছে। মসজিদটি জনসাধারণের জন্য মিউজিয়াম হিসেবে খোলা রয়েছে। শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় কিছুক্ষণ মিউজিয়াম বন্ধ থাকে। তাই মসজিদটি দেখতে যাওয়ার সময় নামাজের কথা খেয়াল রাখবেন।


আয়া সোফিয়া থেকে বের হয়ে হিপোড্রোম থেকে পশ্চিম দিকে সরাসরি হাটলে নীল মসজিদ এর সবচেয়ে সুন্দর ভিউ পাওয়া যাবে। এর স্থাপত্যশিল্প সত্যিই মুগ্ধ করার মতো।


  • গালাটা টাওয়ার



সপরিবারে ইস্তাম্বুলে ঘুরে বেড়ানোর মতো আরেকটি জায়গা গালাটা টাওয়ার। এটি ১৪ শতকে নির্মিত ইস্তাম্বুলের সর্বোচ্চ বিল্ডিংগুলোর একটি। ২২০ ফুট লম্বা এই টাওয়ারটি ৯ তলা। এর ছাদে রয়েছে একটি রুফটপ রেস্টুরেন্ট ও নীচের একটি তলা পুরোটা মিউজিয়াম। রেস্টুরেন্টটিতে ঐতিহ্যবাহী টার্কিশ খাবারের পাশাপাশি টার্কিশ নাচ ও প্রদর্শিত হয়।  


টাওয়ারটি কয়েক শতক ধরে ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং ছিলো। ঝড় ও আগুনের কারণে এটি বেশ কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। টাওয়ারের সর্বোচ্চ তলা থেকে ইস্তাম্বুল শহরের নয়নাভিরাম ৩৬০-ডিগ্রী প্যানারমিক ভিউ পাওয়া যায়।


গালাটা টাওয়ারে ঢোকার জন্য ট্যুরিস্টদের বিশাল লাইন লেগে থাকে। তাই ভালো হয় একদম সকাল সকাল গেলে। টিকিটের দাম ১৩০ টার্কিশ লিরা। 


  • ইস্তাম্বুল আর্কিওলজি মিউজিয়াম



ইস্তাম্বুল আর্কিওলজি মিউজিয়াম ৩টি সেকশন নিয়ে গঠিত– আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম, এনশিয়েন্ট ওরিয়েন্ট মিউজিয়াম আর টাইলড কিওসক মিউজিয়াম। আর্কিওলজিকাল মিউজিয়ামে রয়েছে অনেক অনেক ভাস্কর্য ও সমাধি। এর মধ্যে সিডনের লিপিখাচিত পাথরের শবধার উল্লেখযোগ্য।


শুধু তুরস্কই নয়, ইস্তাম্বুল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম মধ্যপ্রাচ্য থেকেও প্রত্নতত্ব সংগ্রহ ও প্রদর্শন করে। এনশিয়েন্ট ওরিয়েন্ট সেকশন এ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলাম-পূর্ব শিল্প ও সংস্কৃতির নানা রকম নিদর্শন।


সুলতান মুহাম্মাদের আদেশে তৈরি মিউজিয়ামের তৃতীয় সেকশনে রয়েছে সিরামিক তৈরি শিল্পের নিদর্শন। এখানে আরো রয়েছে হিপড্রোমের সারপেন্ট কলামের ত্রিমুখী সাপের একটির মাথা। 


  • গ্র্যান্ড বাজার



গ্র্যান্ড বাজার পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ বাজার যেখানে ইস্তাম্বুলের সবকিছু পাওয়া যায়। প্রতি বছর লাখ লাখ ট্যুরিস্ট দেখতে আসে এই বিখ্যাত বাজার। বাজারটি পুরোপুরি ঢাকা এবং পুরু দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত। এটি দুটি মসজিদের মাঝখানে অবস্থিত।


বাজারে ঢোকার জন্য ১১টি গেইট রয়েছে। এর দোকানগুলোতে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি “টার্কিশ ডিলাইট”, শোপিস, কফি, ইভিল আই থেকে শুরু করে টার্কিশ কার্পেট, স্কার্ফ, সিল্ক, ব্যাগ, জুতা, ঘড়ি সবকিছু পাওয়া যায়।


এখানে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি। তাই এখান থেকে না কিনে বাজার থেকে বের হয়ে আশেপাশের খোলা দোকানগুলোতে কেনাকাটা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 


  • বসফরাস স্ট্রেইট



ইস্তাম্বুল ভ্রমণ পূর্ণ হবে না বসফরাসে একটা ফেরী ট্রিপ ছাড়া। এই ফেরিগুলো প্রতিদিন প্রতিদিন ট্যুরিস্টদের নিয়ে ইস্তাম্বুল ছেড়ে যায় আর বসফরাসের তীর ঘেঁষে থাকা ইস্তাম্বুলের নতুন আর পুরোনো শহর দেখায়। ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে সুন্দর ভিউ পাওয়া যায় ফেরী থেকে।


বসফরাসের দুই পাশে তীর ঘেঁসে রয়েছে অদ্ভূত সুন্দর কিছু প্রাসাদ, দূর্গ ও অট্টালিকা। ফেরীতে বসে রিল্যাক্সে দূর থেকে সেগুলো দেখুন আর পানির কলকল শব্দ উপভোগ করুন। বসফরাস ট্যুরে মোট ৪ থেকে ৭ ঘন্টা লাগে। নির্ভর করছে আপনি কোন ট্যুরটা নিচ্ছেন তার ওপর।


ইস্তাম্বুল ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু টিপস



ইস্তাম্বুল ভ্রমণের আগে জেনে নিন কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যঃ


  • এয়ারপোর্টে নেমে ইস্তাম্বুল কার্ড কিনে নিবেন বুথ থেকে। তাহলে যানবাহনে চলাচল সহজ হবে এবং ভাড়াও কম পড়বে।


  • ইস্তাম্বুল ঘুরে দেখার জন্য হাঁটা ভালো। কারণ অধিকাংশ দর্শণীয় স্থানই কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত। 


  • মিটার চালু আছে কিনা চেক করে ট্যাক্সিতে উঠবেন। এমনিতে ট্যাক্সির চেয়ে লোকাল ট্রান্সপোর্টের সেবা নেয়া বেটার। ইস্তাম্বুলে অনেক ট্রাম, বাস ও ট্রেইন আছে।


  • এখানকার স্থানীয়রা একটু রাগী ও খিটখিটে স্বভাবের হয়। তাই ভড়কে না গিয়ে কোন সমস্যা হলে লোকাল পুলিশের সাহায্য নিন।


  • অচেনা কেউ অ্যাপ্রোচ করলে কথা বলবেন না। ট্যুরিস্ট এরিয়া বলে স্ক্যামার এর অভাব নেই এখানে। 


  • এখানে খাবারের দাম তুলনামূলক কম। তাই ইন্টারন্যাশনাল ফুড চেইনে না গিয়ে নির্দ্বিধায় এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিন। ডোনার কাবাব, বাকলাভা ও টার্কিশ ডিলাইট ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত খাবার। খেতে ভুলবেন না যেন। 


  • বিখ্যাত টার্কিশ হাম্মাম এর অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য ইস্তাম্বুলে ৬০টির মতো চালু হাম্মাম রয়েছে। রাতের বেলা গেলে হাম্মামে ডিসকাউন্ট প্রাইসে সেবা নিতে পারবেন। 


  • ইস্তাম্বুলে সব ধরণের ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। আপনার টেস্ট ও বাজেটের ওপর ভিত্তি করে বেস্ট হোটেল বা হোস্টেলটি বেছে নিতে খুব বেশি বেগ পোহাতে হবে না। চেষ্টা করবেন সুলতানাহমেত, তাকসিম স্কয়ার, এমিননু স্কয়ার,গালাটা এর আশেপাশে থাকতে। ওখান থেকে সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা সহজ।


  • থাকা, খাওয়া, ঘুরে বেড়ানো মিলে ইস্তাম্বুল ভ্রমণ খরচ জনপ্রতি প্রায় ১,২০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০০ টাকা এর মতো। প্লেনের টিকেট কয়েক মাস আগে কেটে রাখলে দাম কম পড়বে। গ্রুপে গেলে খরচ অনেক কমে যাবে। 


  • তুরস্কের ট্যুরিস্ট ভিসা এপ্লাই করতে বিমানের রিটার্ন টিকেট ও হোটেল বুকিং এর প্রুফ লাগবে। ১৮০ দিনের ভিসা আরো ৩০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।


শেষ কথা


ইস্তাম্বুল প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুর স্বপ্নের শহর। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ইস্তাম্বুল ভ্রমণ সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। ঢাকা টু ইস্তাম্বুল বিমান ভাড়া জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন


এই ব্লগটি ভালো লাগলে আমাদের অন্য ব্লগগুলো ও পড়তে পারেন।

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :