List of Best Hotels in Bangladesh
ভারতের রাজধানী দিল্লির দুটি ভাগ রয়েছে– নিউ দিল্লি এবং পুরান দিল্লি। নিউ দিল্লি বর্তমান আধুনিক ভারতের প্রশাসনিক অধিদপ্তর। আর পুরাতন দিল্লি বা পুরানা দিল্লি ছিলো ভারতবর্ষে মুঘল শাসকদের প্রশাসনিক রাজধানী ও বাসস্থান। পুরাতন দিল্লির পুরোটাই ইতিহাসে টইটম্বুর। বাংলাদেশ থেকে পর্যটকেরা পরিবার নিয়ে দিল্লি গেলে প্রধানত এই এলাকাটাই ঘুরতে যায়। নিউ দিল্লি থেকে ঘন্টা দুয়েকের দূরত্বে আগ্রায় রয়েছে মুঘল শাসনামলের অন্যতম প্রধান কয়েকটি স্থাপত্য যেগুলো না দেখলে আপনার দিল্লি ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এই ব্লগে আমরা চেষ্টা করবো আপনার ভ্রমণকে আরো সহজ করার জন্য দিল্লির দর্শনীয় স্থান, দিল্লি যাওয়ার আদর্শ সময়, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, এবং সব মিলিয়ে খরচ কেমন পড়বে তার একটি পূর্নাঙ্গ বিবরণ।
পরিবার নিয়ে দিল্লিতে ঘোরার মতো অনেক জায়গা আছে। ৪-৫ দিন থেকে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে দিল্লি গেলে সবগুলো জায়গা ঘোরা সম্ভব। দিল্লি মূলত মুঘল ও পরবর্তীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। আর এই জায়গাগুলো পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য একদম পারফেক্ট। আসুন দেখি দিল্লিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার মতো কী কী জায়গা আছে–
দিল্লি গেলে পরিবার নিয়ে সর্বপ্রথম যে জায়গাটা ঘুরতে যেতে পারেন তা হলো নিউ দিল্লির ইন্ডিয়া গেট। ইন্ডিয়া গেট নির্মিত হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্যগণ প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ। যুদ্ধে শহীদ হাজার হাজার সৈন্যদের নাম খোদাই করা আছে ইন্ডিয়া গেটের গায়ে। ফ্রেঞ্চ স্থাপত্যকলায় নির্মিত অপূর্ব এই স্মৃতিস্মারকটি ভারতের রাষ্টপতি ভবনের কাছে রাজপথের শেষ মাথায় অবস্থিত।
১৩৮ ফুট উঁচু ইন্ডিয়া গেটের সাথে প্যারিসের “আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ” এর অনেক মিল। ইন্ডিয়া গেটের ঠিক নিচেই রয়েছে কালো মার্বেলের তৈরি বেদির ওপর বসানো “অমর জওয়ান জ্যোতি” নামক চিরন্তন শিখা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সৈনিকদের স্মৃতিচারণে প্রজ্বলিত রয়েছে এই শিখাটি।
দিল্লি ভ্রমণে পর্যটকদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থান তাজমহল। দিল্লি এলেই দেশ বিদেশের পর্যটকরা ছুটে যান আগ্রায় অবস্থিত তাজমহল দেখতে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য নির্মাণ করিয়েছিলেন অসাধারণ সুন্দর এক সমাধিস্তম্ভ যার নাম তিনি নিজেই দিয়েছিলেন “তাজমহল”। তাজমহলের সৌন্দর্য ব্যখ্যা করা কঠিন। এটি উপলব্ধির বিষয়। তাজমহলকে বলা হয় ভালবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
১৬৩১ শাহজাহানের ১৪ তম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান মমতাজ মহল। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে শোকাহত শাহজাহান মৃত মমতাজ মহলের অনুরোধ রাখতে ও তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সিদ্ধান্ত নেন এমন একটি স্মৃতিসৌধ বানাবেন যার দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে। শ্বেতপাথরে তৈরি তাজমহল নির্মাণ করতে ২২,০০০ শ্রমিকের ২২ বছর সময় লাগে। বিশ্বের সেরা শিল্পী, স্থাপত্যবিদ, ও ক্যালিগ্রাফারদের নিয়োগ করা হয় তাজমহল নির্মাণের উদ্দশ্যে। শাহজাহান মুঘল কোষাগার প্রায় খালি করে দেন এই স্থাপত্য নির্মাণ করতে গিয়ে।
তাজমহলে মমতাজের পাশেই সমধিস্থ হয়েছেন সম্রাট শাহজাহান।
মুঘল সম্রাটদের বাসভবন ছিলো লালকেল্লা বা আগ্রা ফোর্ট। ব্রিটিশরা এসে যদিও এর অনেক ক্ষতি করে গিয়েছে কিন্তু তবুও লালকেল্লার সৌন্দর্য এখনো প্রশংসনীয়। দূর্গটি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ১৬৩৮ সালে নির্মিত লালকেল্লা ও মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অবদান। এটি মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম একটি নিদর্শন।
ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট লালকেল্লার প্রধান স্থাপনাগুলো হলোঃ লাহোরি গেট, দিল্লি গেট, নহবত খানা, দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, মমতাজ মহল, শিশ মহল, রঙ মহল, খাস মহল, ইত্যাদি। এর মধ্যে শিশ মহল, দেওয়ান-ই-খাস, ও খাস মহল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লালকেল্লার অসাধারণ সুন্দর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত মোহময় ও আকর্ষণীয়। কেল্লার ভেতর ঢোকার পর আপনার মনে হবে আপনি মুঘল যুগে চলে এসেছেন এবং ইতিহাস আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
লালকেল্লার পাশেই অবস্থিত জামে মসজিদ। ঐতিহাসিক এই মসজিদটিও সম্রাট শাহজাহানের আমলে নির্মিত হয়েছে। তৎকালীন সময়ে ১ মিলিওন রুপি ছিলো এর নির্মাণ খরচ। এটি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ ও মুঘল স্থাপত্যবিদ্যার অসাধারণ একটি নিদর্শন। এখানেই মুঘল সম্রাটগণ নামাজ পড়তেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে অনাথ শিশুদের স্কুল, দরগাহ, ও সমাধিস্থল রয়েছে। দেশ বিদেশ থেকে মুসলিম পর্যটকেরা তাদের দিল্লি ভ্রমণে লালকেল্লা দেখতে এসে এই মসজিদেই নামাজ পড়ে যান। এছাড়াও শুক্রবারে জুম্মার নামাজ ও ঈদের নামাজ পরার জন্য দিল্লির বেশিরভাগ মুসলিমরা এই মসজিদটিই বেছে নেন।
২৩৮ ফুট উঁচু কুতুব মিনার একটি বিজয় টাওয়ার যা ১১৯২ সালে কুতুবউদ্দিন আইবেকের নির্দেশে নির্মিত হয়। এটি ইউনেস্কো দ্বারা স্বীকৃত একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। ভবনটির গায়ে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি ও কারুকার্য খচিত আছে। ৫-তলা বিশিষ্ট টাওয়ারটিতে ওপরে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে যা দিয়ে চাইলে ৫ তলায় উঠে আশেপাশে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যেত। কিন্তু সিঁড়িঘরটির গেটে এখন তালা দেয়া থাকে কারণ কুতুব মিনারের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে কয়েক বছর আগে ৪৫ জন মারা যায় যার বেশিরভাগই ছিলো শিশু। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সরু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পর্যটকদের হুড়োহুড়ি ও প্যানিকের কারণে এমন হয় বলে জানা গেছে।
ইউনেস্কো দ্বারা স্বীকৃত আরেকটি ঐতিহাসিক হেইটেজ সাইট হুমায়ুনের সমাধিসৌধ। দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুন কে রাজকীয় ভঙ্গিতে সমাধিস্থ করতে বিশাল এলাকা নিয়ে এই সমাধিসৌধটি নির্মান করা হয়। সমাধিসৌধটি নির্মাণের নির্দেশ দেন হুমায়ুনের প্রিয়তম স্ত্রী বেগা বেগম যিনি হাজী বেগম হিসেবেও পরিচিত। সমাধিসৌধটির ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত সুন্দর ডিজাইন ও ফ্লোর প্ল্যানের সমন্বয়ে একে করেছে অনন্য। হুমায়ুনের সমাধিসৌধে মোট ১৫০টির মতো সমাধি রয়েছে এখানে যার মধ্যে বেশিরভাগই নাম না জানা মুঘল পরিবারের সদস্যদের।
১৬ শতকে নির্মিত এই সমাধিসৌধটি মুঘল ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তাজমহল নির্মাণের সময় শাহজাহান এখান থেকেই অণুপ্ররনা গ্রহণ করেন। হুমায়ুনের সমাধিসৌধের আশেপাশে আরো কিছু স্থাপনা রয়েছে, এছাড়াও আছে সুন্দর বাগান যার রক্ষণাবেক্ষণ সরকারিভাবে করা হয় আর মুঘল আমলে নির্মিত কিছু ঝর্ণা। দিল্লি ভ্রমণে এলে এই জায়গাটি ঘুরে যেতে ভুলবেন না।
লালকেল্লা থেকে বের হয়ে যে পথ চলে গেছে সেদিকে আরেকটু সামনে গেলেই পৌঁছে যাবেন পুরাতন দিল্লির ঐতিহ্যবাহী মার্কেট চাঁদনী চক এ। এটি দিল্লির অন্যতম বিখ্যাত শপিং মার্কেট। সম্রাট শাহজাহান এর প্রিয় কন্যা জাহানারা বেগমের হাতে গোড়াপত্তন ঘটেছে চাঁদনী চকের। তখনকার সময়ে চাঁদনী চকের মাঝখান দিয়ে একটা ছোট খাল চলে গিয়েছিলো যা যমুনা নদী থেকে কেটে বের করা হয়েছিলো সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে। সেই খালে পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে অসাধারণ সুন্দর দৃশ্যের অবতরণ ঘটাতো। সেখান থেকেই জায়গাটির নাম চাঁদনী চক হয়।
এখনকা চাঁদনী চক দিল্লির অত্যন্ত কর্মব্যস্ত একটি এলাকা। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় সব পণ্যই এখানে পাওয়া যায়। তবে চাঁদনী চক সবচেয়ে বিখ্যাত বিয়ের সামগ্রী, বিশেষত বিয়ের কনের লেহেঙ্গা ও বরের শেরওয়ানী ও পাগড়ির জন্য। ভারতের সেরা সব ফ্যাশন হাউজগুলোর চেইন শপ রয়েছে চাঁদনী চকে। তাই সামনে বিয়ের প্রোগ্রাম থাকলে পুরো পরিবার নিয়ে চাঁদনী চক থেকে অনেক কমে শপিং সেরে নিতে পারেন।
অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে দিল্লি ভ্রমণের সেরা সময়। কারণ এই সময় দিল্লিতে শীতকাল থাকে এবং দিল্লির অসহনীয় গরম এভয়েড করা যায়। এ সময় নানা রঙের ফুল ফোটে ও প্রকৃতি অনেক শান্ত থাকে যা আপনার ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
দিল্লি ভ্রমণে যেতে হলে আপনাকে অনলাইনে ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ইন্ডিয়ান ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ভিস্তারা, ইন্ডিগো এয়ার এর বেশ কটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা টু দিল্লি বিমান ভাড়া ও ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসুন ভিজিট করুন flightexpert.com। কমপক্ষে ১৫ দিন আগে টিকেট কাটলে ভাড়া অনেক কমে পাবেন।
সরাসরি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে দিল্লি পৌঁছাতে লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। কমপক্ষে ৩-৫ দিন সময় নিয়ে দিল্লি ঘুরে আসুন।
দিল্লির সেরা হোটেলগুলো হলোঃ
পরিবার নিয়ে থাকার মতো রিজনেবল প্রাইসের কিছু হোটেলগুলো হলোঃ
Micasa Suites
Novotel New Delhi Aerocity
মুখরোচক স্ট্রিট ফুডের জন্য দিল্লি বিখ্যাত। দিল্লি গেলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন গোল গাপ্পা (ফুচকা), ছোলে বাটোরে, পারাঠা (পরোটা), কাবাব, চাট, বাটার চিকেন, বিরিয়ানি, রোল, এবং গরম গরম সমুচা ট্রাই করতে। আপনি যদি ফুডি হন তবে দিল্লি গিয়ে খাবারের এতরকম অপশন দেখে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। এই খাবারগুলো বাচ্চারাও খুব পছন্দ করে। এছাড়া স্বাদ পরিবর্তন করতে চাইলে কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস তো আছেই!
দিল্লি ঘুরতে যাওয়ার আগে সব মিলিয়ে কত টাকা লাগতে পারে সে ব্যপারে ধারণা থাকা জরুরি। দিল্লি ভ্রমণ খরচ নিম্নরুপঃ
রিটার্ন বিমান ভাড়া - জনপ্রতি ২০,০০০- ২৫,০০০ টাকা (যত আগে টিকেট কাটবেন তত কমে পাবেন)
হোটেল রুম ভাড়া - প্রতি রাত ৫,০০০-৬,০০০ টাকা
সিম কার্ড - ১,২০০ টাকা
খাবার - দিন প্রতি ১,৫০০ টাকা
সুতরাং, সব মিলিয়ে দিল্লি ভ্রমণে যাতায়াত খরচ ও প্রবেশ ফি বাদে আপনার মোট খরচ হতে পারে ৫০,০০০-৬০,০০০ টাকা। হোটেল রুম ও খাবার খরচে সাশ্রয়ী হলে খরচ আরো অনেক কমানো সম্ভব।
তো এই ছিলো দিল্লি ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত। ঢাকা থেকে দিল্লি বিমান ভাড়া কত জানতে ভিজিট করুন flightexpert.com। ইন্ডিয়ান ভিসা ও দিল্লির হোটেল সম্পর্কিত তথ্যের জন্য কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন।
ব্লগটি ভালো লাগলে ও আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ভিজিট করুন আমাদের ব্লগ পেইজটি।
আমাদের ভারত ভ্রমণ রিলেটেড অন্যান্য ব্লগগুলোঃ
কলকাতা ভ্রমণ গাইডঃ কিভাবে যাবেন ও কোথায় কোথায় ঘুরবেন
ঢাকা থেকে চেন্নাই এর সেরা হাসপাতাল-এ গিয়ে চিকিৎসা নিতে যা যা করা লাগবে
List of Best Hotels in Bangladesh
List of Best Hotels in Bangladesh
List of Best Hotels in Bangladesh
Biman Bangladesh Airlines – 12 Reasons to fly with Biman
By Rahat Muna
July 26, 2022
Thinker & Designer