বালি ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ

বালি ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ

হানিমুনে কোথায় যাওয়া যায় ভাবছেন? অথবা বছর শেষে পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান? তাহলে এখনই প্ল্যান শুরু করুন। হানিমুন হোক আর বাৎসরিক ছুটি– দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের প্রথম পছন্দ ইন্দোনেশিয়ার বালি। বালির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সবাইকে সমানভাবে টানে। কিন্তু আরো স্পেশালি বললে এটি হানিমুনের জন্য আদর্শ জায়গা। 


বালিতে যাওয়া-আসা, থাকা, খাবার এবং ঘুরাঘুরি খরচ তুলনামূলক কম বিধায় এক সপ্তাহ সহজেই কাটিয়ে আসা যায়। আর এক সপ্তাহ বালির সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি আর অক্টোবর মাসে বালিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। তাই এই সময়গুলো ছাড়া যেকোন সময় বালি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। 


এবার আসুন আলোচনা করি বালির ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে।


বালি ভ্রমণঃ দর্শনীয় স্থান


“দেবতাদের দ্বীপ” খ্যাত বালিতে ঘুরে দেখার জায়গার অভাব নেই। পাহাড়, সমুদ্র আর ১০,০০০ এর বেশি মন্দিরের মিশেলে ইন্দোনেশিয়ার এই অদ্ভুত সুন্দর দ্বীপ রাজ্যটি  রুপে গুণে অনন্য। আসুন দেখি কোন কোন জায়গাগুলো বালি ভ্রমণের সময় ঘুরে দেখা অত্যাবশ্যকীয়ঃ 


১/ উবুদ


উবুদ বালির সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে প্রচুর মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। এখানে আপনি সহজেই ২-৩ দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে পারেন। বালি এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি বা ট্যাক্সিতে করে উবুদ যেতে আনুমানিক দেড় ঘন্টা লাগে।


উবুদে দেখার মতো যা যা আছে



উবুদ মাঙ্কি ফরেস্ট ইন্দোনেশিয়ান সরকার দ্বারা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং এখানে আছে স্থানীয়দের পবিত্র মন্দির। মন্দিরের আশেপাশে প্রচুর বানরের সন্ধান পাওয়া যায় যারা এখানে বংশানুক্রমিকভাবে কয়েকশো বছর ধরে অবস্থান করছে। বানরগুলোর সাথে চোখাচখি হলে চোখ নামিয়ে নিবেন ও তাদের কিছু খাওয়াবেন না। আর নিজের জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন, বানরগুলো দুষ্ট প্রকৃতির। ছোঁ মেরে হাতের জিনিস নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে এদের।


মাঙ্কি ফরেস্টে বিখ্যাত কোপি লুয়াক কফি বানানোর পদ্ধতি দেখে টাইম পাস করতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে “জাঙ্গাল সুইং” বা পাহাড়ের ধারের দোলনা‍য় চড়ার দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ।


উবুদের উত্তরে আছে চোখ জুড়ানো সুন্দর “তেগেলালাং রাইস টেরেস” যেখানে পাহাড় কেটে চাষ করার জন্য অতি সুন্দরভাবে তাক তাক করে ধান রোপণ করা হয়। চাষের এই পদ্ধতিকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় “সুবাক”। এখানেও জাঙ্গাল সুইং রয়েছে।


পুরা তীর্থ এম্পুল” উবুদের বিখ্যাত মন্দির যেখানে বালির হিন্দুরা “পেত্রিতান” এ পূণ্যস্নান নিতে যান। পেত্রিতান একটি প্রাকৃতিক পানির উৎস। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে এর পানিতে গোসল করলে সব পাপ ধুয়েমুছে যায়। পেত্রিতান এ ১৩টি ঝর্না রয়েছে। এর যেকোনটিতে আপনিও গোসল করে নিতে পারেন। মন্দিরে ঢোকার সময় গেটের কাছ থেকে আব্রু ঢাকার জন্য স্যারং ভাড়া করে পরে নিন। 


তারপর যেতে পারেন তেগেনুনগান ঝর্ণা দেখতে। এজন্য একদিনের একটা ডে ট্যুরই যথেষ্ট। ২৫ মিটার উঁচু ঝর্ণাটির পানি খুবই শক্তিশালি হয়ে মাটিতে পড়ে, বিশেষত বর্ষাকালে। গরমকালে এর ঠান্ডা পানি দেখলেই ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে করে। এছাড়াও জায়গাটি ছবি তোলার জন্য পার্ফেক্ট।  


মাউন্ট বাটুর” একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭১৭ মিটার উঁচু। উবুদ থেকে এখানে যেতে গাড়িতে মাত্র ১ ঘন্টা লাগে। ট্যুরিস্টরা পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেলে করে এর চূড়ায় যেতে পারে। তবে পায়ে হেঁটে যেতে চাইলে স্ট্যামিনা ভালো থাকতে হবে। মাউন্ট বাটুরে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতা সব ট্যুরিস্টই পেতে চায়। 


উবুদ প্যালেস বা “পুরি সারেন” আরেকটি ঐতিহাসিক জায়গা। এর স্থাপত্যশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্যালেসের কাছেই রয়েছে উবুদ আর্ট মার্কেট। এখান থেকে স্যুভেনির নিয়ে নিতে পারেন বন্ধু বান্ধব আত্বীয়স্বজনের জন্য।

 

২/ নুসা দ্বীপপুঞ্জ



নুসা দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে বালির সবচাইতে সুন্দর কিছু জায়গা। এখানে আরো রয়েছে স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, স্পীড বোট রাইডিং সহ অনেক অনেক এক্সাইটিং অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ। নুসা দ্বীপপুঞ্জে আচগে জগদ্বিখ্যাত কিছু সমুদ্রসৈকত। এসব কিছু নিয়েই আমরা এখন আলোচনা করবো।


বালি থেকে নুসা দ্বীপপুঞ্জে যেতে লাগে মাত্র ৪৫ মিনিটের একটি ফেরি রাইড। ফেরিই যাতায়াতের সবচেয়ে জনপ্রিয় আর সুবিধাজনক মাধ্যম, সেই সাথে সাশ্রয়ী ও বটে। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৯ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮০০ টাকা ।  


নুসা দ্বীপপুঞ্জে দেখার মতো যা যা আছে


নুসা দ্বীপপুঞ্জ মূলত ৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। যথাঃ নুসা পেনিদা, নুসা লেমবনগান ও নুসা সেনিনগান।


নুসা পেনিদা



নুসা দ্বীপপুঞ্জগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ নুসা পেনিদা। এটি পর্যটকদের মধ্যে বালির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান বলে বিবেচিত। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের দেখা পায় নুসা পেনিদা। বাইকে করে নুসা পেনিদা ঘুরে দেখা সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী। দিনে মাত্র ৩০০ টাকা খরচ করে পুরো নুসা পেনিদা ঘুরে দেখতে পারবেন অনায়াসেই। অপরদিকে, বাইক চালানো না জানলে বা পরিবারের বয়স্কদের নিয়ে গেলে আপনাকে গাড়ি ভাড়া করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার দিনে ৫,০০০ টাকার মতো খরচ হবে।


নুসা পেনিদা বলতে অনেকেই কেলিংকিং বীচ বোঝেন। এর পেছনে সঙ্গত কারণ ও আছে। পেপারে, খবরে, পোস্টকার্ডে আমরা নুসা পেনিদার ছবি হিসেবে কেলিংকিং বীচের বিখ্যাত টি-রেক্স পাহাড়ের ছবিটিই দেখি। হ্যা, সেই কেলিংকিং বীচের কথাই বলছি। নুসা পেনিদার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অদ্ভুত সুন্দর এই কেলিংকিং বীচ আর তার ওপরে টি-রেক্স আকৃতির পাহাড়টি। পাহাড় ধরে নীচে নামার ব্যবস্থা আছে কিন্তু সেটা একটু কষ্টসাধ্য। অনেকেই পাহাড়ের ওপর থেকে ছবি তুলেই খুশি থাকেন। 


এটি ছাড়াও নুসা পেনিদার অন্যান্য বিখ্যাত জায়গাগুলো হচ্ছে- আতুহ বীচ, ডায়মন্ড বীচ, পাসিহ ঊগ বীচ, ক্রিস্টাল বে, পেগুইয়াঙ্গান ওয়াটারফল, এঞ্জেল’স বিলাবং, ট্রেম্বলিং বীচ এন্ড ফরেস্ট, ইত্যাদি।


নুসা পেনিদাতে স্নরকেলিং, সার্ফিং, স্পীড বোট রাইডিং, ডীপ সী ডাইভিং সহ অনেক এক্সাইটিং এক্টিভিটিজ এ অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। 


নুসা লেমবনগান



নিরিবিলি সৈকতের ধারে বসে অলস সময় কাটাতে চান? তাহলে নুসা লেমবনগান আপনার জন্য আদর্শ জায়গা কারণ এখানে আছে নুসা দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে নিরিবিলি কয়েকটি সমুদ্রসৈকত। এছাড়াও এটি সার্ফারদের প্রিয় জায়গা। দুঃসাহসিক কার্যকলাপ প্রিয় যাদের তারাও নুসা লেমবনগানে আসেন ক্লিফ জাম্পিং, কেভ পুল ডাইভিং, স্নরকেলিং, মোটরবাইক রাইডিং করতে। অধিকাংশ পর্যটক নুসা পেনিদাতে ভীড় করার কারণে যারা নিরিবিলি থাকতে চান তারা নুসা লেমবনগানে চলে আসেন।


নুসা লেমবনগানের কিছু বিখ্যাত পয়েন্ট হচ্ছে- ড্রীম বীচ, ডেভিল’স টিয়ার, মান্টা পয়েন্ট, ইয়েলো ব্রীজ, শীপরেক পয়েন্ট, ইত্যাদি।


নুসা সেনিনগান



নুসা দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে ছোট দ্বীপ নুসা সেনিনগান। নুসা লেমবনগান থেকে খুব সহজেই ইয়েলো ব্রীজ ব্যবহার করে নুসা সেনিনগান পৌঁছানো যায়। নুসা সেনিনগান ঘুরে দেখার জন্য একদিনের ডে ট্রিপ ই যথেষ্ট। নুসা সেনিনগানের উল্লেখযোগ্য কিছু জায়গা- ব্লু লেগুন, সিক্রেট বীচ ও মাহানা পয়েন্ট। এর মধ্যে মাহানা পয়েন্ট ও ব্লু লেগুন ক্লিফ জাম্পিং এর জন্য বিখ্যাত। মাহানা পয়েন্ট এর ১০ মিটার লম্বা ক্লিফ জাম্পিং পয়েন্টে এক্সাইটমেন্ট এর খোঁজে সমবেত হন থ্রীল-সীকার রা।


৩/ কুটা



কুটা বালির দক্ষিণে, বালি এয়ারপোর্ট থেকে কাছে অবস্থিত। এই জায়গাটি আগে মাছ ধরা জেলেদের গ্রাম ছিল, এখন ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট। এয়ারপোর্টের কাছে হওয়াতে কুটায় অনেক লাক্সারিয়াস হোটেল, রিসোর্ট ও ট্যুরিস্ট আকর্ষণ বিদ্যমান। কুটা জেলার মধ্যে সেমিন্যাক, নুসা দুয়া, জিমবারান, ও কাঙ্গু অবস্থিত।


নিচে আমরা কুটার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থানের বিস্তারিত বর্ণনা করবোঃ


কুটা বীচ 



কুটা বীচ বালির ব্যস্ততম সমুদ্রসৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক পর্যটক কুটায় এসে ভিড় করে কারণ বালির শহরগুলোর মধ্যে কুটাই অস্ট্রেলিয়া থেকে সবচেয়ে কাছে। এই বীচে প্রায় সবসময়ই মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এ কারণে এই বীচটি অন্যান্য বীচের তুলনায় অনেক প্রাণবন্ত। 


অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক বিখ্যাত সার্ফাররা কুটা বীচে আসে সার্ফ করতে। বীচে সবসময়ই কিছু না কিছু খেলাধুলা বা কাজ হচ্ছে। পর্যটকদের প্রায়ই দেখা যায় বীচ ফুটবল, বীচ ভলিবল সহ নানা খেলায় মেতে থাকতে। এই বীচে এসে আপনি অবশ্যই এঞ্জয় করবেন, কারণ বীচের পরিবেশটাই অনেক প্রাণচাঞ্চল্যে পূর্ণ। 


জিমবারান, সানুর ও নুসা দুয়া বীচ কুটার সবচেয়ে নিরিবিলি বীচ। যদি নিরিবিলি কিছু সময় কাটাতে চান তাহলে এগুলোতে চলে যান।


সার্ফারদের জন্য কাঙ্গু, বালানগান, পাদাং-পাদাং, অথবা উলুওয়াতু এর হিডেন বীচ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


পুরা তানাহ লট



পুরা তানাহ লট মন্দিরটি কুটা থেকে ২০ কি মি দূরে অবস্থিত। আপনি যদি কুটায় যান তবে এখানে অবশ্যই যাবেন। এই পৌরাণিক মন্দিরটি সমুদ্রের মাঝে অবস্থিত যা একে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে। ১৬ শতকের এই মন্দিরটি বালির সবচেয়ে সুন্দর আর সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা মন্দিরগুলোর একটি।


পাথরের তৈরি মন্দিরটির পেছনে যখন সূর্য অস্ত যায় সেই দৃশ্যটি দেখার জন্যই পর্যটকরা ছুটে আসে এই মন্দিরে। 


৪/ পুরা লেমপুইয়াং টেম্পল 



কুটা থেকে একদিনের ট্রিপে ঘুরে আসার মতো জায়গা লেমপুইয়াং পাহাড়ের ওপর অবস্থিত পুরা লেমপুইয়াং টেম্পল। বালির বিখ্যাত এই মন্দিরটি কে না চেনে। ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামের বদৌলতে এখানকার “স্বর্গের দুয়ার” এ তোলা পর্যটকদের ছবির মাধ্যমে দুনিয়াজোড়া মানুষ এখন চেনে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরটিকে।  


সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই মন্দিরটিতে যেতে হলে লেমপুইয়াং পাহাড়ে উঠতে হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা লাগে পাহাড়টির চূড়ায় পৌছাতে। একবার পৌঁছে গেলে আপনার জন্য অপক্ষা করছে অবিরাম বিস্ময়। নিঃশ্বাস বন্ধ করা সৌন্দর্য ছুঁয়ে যাবে আপনার মন।


বালি গিয়ে কোথায় থাকবেন

খরচ বাঁচাতে চাইলে উবুদে সাশ্রয়ী থাকার জায়গার অভাব নেই। মধ্যম-রেঞ্জের হোটেলগুলো ট্রাই করতে পারেন, অথবা হোমস্টে’র ব্যবস্থা ও রয়েছে। হোমস্টে মানে স্থানীয়দের বাসায় পেয়িং গেস্টের মতো থাকা। যারা একটু হোমলি পরিবেশে থাকতে চান তাদের জন্য উবুদে অনেক ভালো ভালো হোমস্টে’র অপশন আছে। এই হোমস্টেগুলোতে মাত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে অনেক সুন্দর ভিলা’র মতো স্যুইট পাওয়া যায়।

 

নুসা দ্বীপপুঞ্জে, বিশেষত নুসা পেনিদায় থাকার জন্য অনেক লাক্সারিয়াস হোটেল ও প্রাইভেট ভিলা রয়েছে। এছাড়াও সেখানে সবরকম পর্যটকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। হানিমুন কাপলদের জন্য সুইমিং পুল সহ প্রাইভেট ভিলা রয়েছে বেশ সুলভ মূল্যে। সপরিবারে গেলে পুরো পরিবার একসাথে থাকার সুবিধার্থে রয়েছে অনেকগুলো রুম নিয়ে বড় স্যুইটসহ মাঝারি মানের হোটেল। শুনে অবাক হবেন, নুসা পেনিদাতে সমুদ্রের দিকে মুখ ফেরানো অসাধারণ সুন্দর ভিউসহ রুম পাওয়া যায় মাত্র ২,০০০ টাকায়!

 

বালি গিয়ে কী খাবেন

বালিতে যেখানেই থাকবেন সকালে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট পাবেন। ব্রেকফাস্টে সাধারণত ব্রেড, ডিম, প্যানকেক ও তাজা ফলফলাদি থাকে।


উবুদে দুপুরের লাঞ্চ করার জন্য অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি ফরেন ক্যুইজিন ও সার্ভ করে রেস্টুরেন্টগুলো। তবে অর্ডার করার আগে অবশ্যই হালাল কিনা জিজ্ঞেস করে নিবেন। উবুদের কিছু উল্লেখযোগ্য ফরেন ক্যুইজিন এর রেস্টুরেন্ট হচ্ছে- মেলালি উবুদ, যেস্ট উবুদ, ও কিওকা জাপানীজ উবুদ। উবুদে খাবারের মূল্য যথেষ্ট কম। তাই নির্দ্বিধায় উপভোগ করুন জিভে জল আনা উবুদের খাবার।


“ওয়ারাং” অর্থ “রেস্টুরেন্ট”। নুসা দ্বীপপুঞ্জে আপনি যেখানেই যান না কেন এই শব্দটির দেখা অবশ্যই পাবেন।


নুসা পেনিদা’র উল্লেখযোগ্য রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে আছে- ওয়ারাং ফরেস্ট, আমোক সানসেট, এবং ওয়ারাং লন্টো। ওয়ারাং লন্টোতে ইতালিয়ান ও এসিয়ান খাবার পাওয়া যায়। স্পেশালি বাঙালিরা এই  রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে আরাম পাবেন। এখানকার নাসি গোরেং মিস করবেননা। আরেকটি মাস্ট ট্রাই খাবার বানানা ডেজার্ট। এছাড়াও এখানকার জুস ও মিল্কশেইকগুলো ও ট্রাই করে দেখতে পারেন– স্পেশালি আনারসের জুস।


এছাড়াও নুসা সেনিনগানের সী ব্রীজ ওয়ারাং, টোয়াইলাইট হাট’স বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, নুসা লেমবনগানের হাই বার অ্যান্ড গ্রীল, দ্যা ডেক ক্যাফে অ্যান্ড বার, ও মানটিগ’স বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট সৈকতমুখী বিখ্যাত খাবার জায়গা।


বালি ভ্রমণ খরচ


বালি যেতে প্লেন ভাড়া লাগে জনপ্রতি ৩৫,০০০-৪০,০০০ টাকার মতো। প্লেনের টিকেট কয়েক মাস আগে কেটে রাখতে হবে নাহলে ভাড়া আরো বেশি হবে। হোটেল ভাড়া পড়বে প্রায় ২,০০০ টাকার মতো (প্রতি রাতে)। খাওয়ার খরচ দিনে জনপ্রতি ১,০০০ টাকার মতো। বাইক ভাড়া দিনে ৩০০ টাকা। ট্যাক্সি ভাড়া ৫,০০০ টাকার মতো। আর বিভিন্ন জায়গায় এন্ট্রি ফি+পার্কিং সব মিলিয়ে দিনে ১০০-২০০ টাকা। ফুকেটের চেয়ে বালি অনেক বেশি সাশ্রয়ী।


বালি ভ্রমণ খরচ বাঁচাতে কিছু টিপস ও অন্যান্য জরুরি তথ্য


বালি গিয়ে খরচ বাঁচাতে চান? তাহলে ফলো করুন এই ছোট্ট টিপস গুলোঃ


  • বালিতে ঘোরার জন্য মোটরবাইক ভাড়া করা সবচেয়ে সাশ্রয়ী। দিনে মাত্র ৩০০টাকা দিয়ে বালির দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে পারবেন সঙ্গী নিয়ে।

  • বালিতে থাকা খাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম, কিন্তু তার মানে এই নয় যে দামাদামি করা লাগবে না। দামাদামি করে যতটা পারেন খরচ কমিয়ে নিবেন।

  • স্বীকৃত মানি এক্সচেঞ্জারের কাছে মানি এক্সচেঞ্জ করবেন। খুব সাবধান! এক দোকানে ঢুকে সেখান থেকেই মানি এক্সচেঞ্জ করে ফেলবেন না। বরং একটু ঘুরে ফিরে লোকজনের সাথে কথা বলে তারপর ডিসিশন নিবেন। পর্যটক এরিয়াতে ঠকের অভাব নেই।

  • ঝর্ণাগুলো দেখতে যাওয়ার সময় অল্প কিছু টাকা সাথে নিয়ে যেতে ভুলবেন না। ঝর্ণায় প্রবেশ ফি আছে।

  • বালিতে অনেক হোটেল, রিজোর্ট ও হোমস্টে আছে। বুকিং দেয়ার আগে অপশনগুলো ভালোমতো দেখে দামাদামি করে কথা বলে নিবেন। 

  • বালিতে খাবার অর্ডার করার আগে হালাল কিনা চেক করে নিবেন।

  • মন্দিরে ঢোকার আগে শরীর ঢেকে নিবেন ভালোভাবে। অল্প কাপড় পরে মন্দিরে ঢোকা যাবে না। 

  • বেশি বেশি করে সানস্ক্রীন নিয়ে যাবেন। বালিতে সানস্ক্রীণের বিকল্প নেই।


শেষ কথা


তো এই ছিলো বালি ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ। আশা করি এখন আপনার জন্য বালি যাওয়া অনেক সহজ হবে। ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন


এই ব্লগটি ভালো লাগলে আমাদের আরো ব্লগ পড়তে পারেন।


সৈকতের শহর নিয়ে আমাদের অন্যান্য ব্লগঃ


এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর কিছু সৈকতের শহর

মালদ্বীপ ভ্রমণ গাইডঃ হানিমুনের জন্য সবার প্রিয় গন্তব্য

বাংলাদেশীদের জন্য সিঙ্গাপুর ভ্রমণ গাইড ২০২২


By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :