ব্যাংকক ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থান

ব্যাংকক ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থান

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক স্থানীয়দের বন্ধুবাৎসল্য, প্রাণবন্ত পরিবেশ, আর অসাধারণ সুন্দর স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি মন্দিরগুলোর জন্য বিখ্যাত। সারা পৃথিবী থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ব্যাংককে আসে একটু বিশ্রাম করতে, রিল্যাক্সে ঘুরে বেড়াতে, এখানকার প্রকৃতি-সুধা পান করতে আর বিখ্যাত মন্দিরগুলো পরিদর্শন করতে। তাছাড়া ব্যাংককের মজাদার স্ট্রিট ফুডও পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষনীয়।


এই ব্লগে আমরা ব্যাংককের দর্শনীয় স্থান, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন, কি খাবেন, সব মিলিয়ে ব্যাংকক ভ্রমণ খরচ কত পড়বে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 


ব্যাংকক ভ্রমণঃ দর্শনীয় স্থান ও ঘুরতে গিয়ে কী কী করবেন


ব্যাংককের দর্শনীয় স্থানগুলো হলোঃ 


১/ গ্র্যান্ড প্যালেস


ওল্ড টাউন ব্যাংককে রয়েছে ব্যাংককের সবচেয়ে সুন্দর আর প্রাচীন কিছু জায়গা যা না দেখলে আপনার ব্যাংকক ট্রিপের ১৪ আনাই মিস! এর মধ্যে গ্র্যান্ড প্যালেস সবচেয়ে বিখ্যাত। ব্যাংকক গেলে গ্র্যান্ড প্যালেস ঘোরার জন্য একটা দিন আলাদা করে রাখবেন অবশ্যই। ১৭৮২ সালে নির্মিত গ্র্যান্ড প্যালেসে একসময় থাইল্যান্ডের রাজা-রাজড়াদের বাস ছিলো। এখন এটি ব্যাংককের ব্যস্ততম ট্যুরিস্ট স্পট।


২৩,৫১,০০০ স্কয়ারফিট এলাকা নিয়ে গঠিত গ্র্যান্ড প্যালেস একটু নিরিবিলিতে ঘুরে দেখতে চাইলে আপনাকে সকাল ৮টার মধ্যে প্যালেস প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকতে হবে। ২৬ ইঞ্চি উচ্চতার জেড পাথরের “এমারেল্ড বুদ্ধ”  গ্র্যান্ড প্যালেসের সবচেয়ে বিখ্যাত মূর্তি। সবুজ এই মূর্তিটিকে বুদ্ধ’র সবেচেয়ে মূল্যবান ও পবিত্র মূর্তি হিসেবে ধরা হয়। আর যে মন্দিরটিতে এই মূর্তিটি রয়েছে সেটিকেও সবচেয়ে পবিত্র মন্দির হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও গ্র্যান্ড প্যালেসে রয়েছে অসংখ্য ভবন, স্তুপা, মন্দির, প্যাভিলিয়ন, অলিগলি, আর বাগান। থাইল্যান্ডের রাজার বাসভবনটি ব্রিটিশ আর থাই স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত।


  • গ্র্যান্ড প্যালেস প্রতিদিন খোলা থাকে (রাজার জন্মদিন বাদে)। প্রবেশমূল্য ৫০০ বাথ।

  • ঢোকার আগে মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার্থে আপনার কাঁধ ও হাটু ঢেকে নিন।

  • এমারেল্ড বুদ্ধার ছবি তোলা নিষেধ। ক্যামেরা মন্দিরের বাইরে রেখে ঢুকুন।

  • প্রতারক থেকে সাবধান। প্যালেসের বাইরে ঘুরোঘুরিরত প্রতারকরা কিছু বললে পাত্তা না দিয়ে সোজা টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কাটুন। আপনার গাইড লাগলে প্যালেস কর্তৃপক্ষই আপনাকে বিনামূল্যে গাইড সরবরাহ করবে।


২/ ওয়াট ফো মন্দির (হেলান দেয়া বুদ্ধের মন্দির)


ওয়াট ফো মন্দির ব্যাংককের আরেকটি বিখ্যাত মন্দির। এখানেই রয়েছে হেলান দেয়া ৪৬ মিটার লম্বা সোনার পাত বসানো বুদ্ধমূর্তি। বুদ্ধের বাকি সব মূর্তির তুলনায় এই মূর্তিটির ছবি ফটোগ্রাফারদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার তোলা হয়েছে। মন্দিরটিতে এটি ছাড়াও আরো অসংখ্য বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। ওয়াট ফো গ্র্যান্ড প্যালেসের খুব কাছেই অবস্থিত। একদম হাঁটা দূরত্বে। সুতরাং গ্র্যান্ড প্যালেস ঘোরা শেষ করে অনায়াসেই ঘুরে আসতে পারেন ওয়াট ফো মন্দির থেকে।


  • ওয়াট ফো মন্দিরে প্রবেশমূল্য ২০০ বাথ।

  • মন্দির প্রাঙ্গণেই অবস্থিত থাইল্যান্ডের বিখ্যাত একটি ম্যাসাজ স্কুল। এখানে আপনি ম্যাসাজিং শিখে নিতে পারেন আবার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে উপভোগ করতে পারেন বিখ্যাত থাই ম্যাসাজ।

  • মন্দিরে ঢোকার সময় কাঁধ ও হাটু আবৃত করে ঢুকুন।


৩/ ওয়াট আরুন


ওয়াট আরুন বা “সূর্যোদয়ের মন্দির” গ্র্যান্ড প্যালেস আর ওয়াট ফো মন্দিরের ঠিক উল্টোপাশে অবস্থিত। মাঝখানে একটি নদী। ফেরী দিয়ে নদী পার হয়ে যেতে হয়। ওয়াট আরুন রঙ্গীন গ্লাস আর চীনামাটি দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন একটি মন্দির। জটিল প্যাটার্নে আঁকা মন্দিরটি দূর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। আর রাতের বেলা তো এর রুপ আরো বেড়ে যায়! তাই অনেকেই রাতের বেলা নৌকায় করে ঘুরতে যান দূর থেকে মন্দিরটি দেখতে। 


    • মন্দিরে প্রবেশমূল্য মাত্র ৫০ বাথ।

    • মন্দিরে ঢোকার সময় কাঁধ ও হাটু আবৃত করে ঢুকুন।


    ৪/ রুফটপ বার/রেস্টুরেন্ট


    ব্যাংকক গিয়ে পর্যটকদের অন্যতম প্রধান কাজ থাকে কোন একটি রুফটপ বার বা রেস্টুরেন্টে বসে সঙ্গীর সাথে খাবার খাওয়া আর বিকেলের মিষ্টি আলোয় ব্যাংকক শহরের স্কাইলাইন দেখা। ব্যাংককে বেশ কয়েকটা রুফটপ বার আছে যেখান থেকে পুরো শহর দেখা যায়। ব্যাংককের সর্বোচ্চ রেস্টুরেন্টটির নাম Mahanakhon Bangkok SkyBar। এছাড়াও রয়েছে Vertigo - Banyan Tree Bangkok, Sky Bar - lebua at State Tower, Octave Rooftop Bar - Marriott Hotel, ইত্যাদি। এর মধ্যে যেকোনটিতে চলে যান আর উপভোগ করে আসুন ব্যাংকক শহরের বড় বড় ইমারত আর তাদের ঘিরে আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য।


    ৫/ চায়নাটাউন


    ব্যাংকক গিয়ে চায়নাটাউনের বিখ্যাত স্ট্রিট ফুড ট্রাই করতে ভুলবেন না। চায়নাটাউনের স্ট্রিট ফুড মার্কেট ব্যাংককের সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত স্ট্রিট ফুড মার্কেট। মুখরোচক খাবারের এক অপূর্ব সমাহার রয়েছে এই মার্কেটে। কী নেই এখানে! Som Tam (পেঁপের সালাদ), Khao Niao Mamuang (আম মিশ্রিত স্টিকি রাইস) থেকে শুরু করে Kuay Jab Nam Sai (থাই রাইস নুডলস স্যুপ), Kway Teow Rua (বোট নুডলস), Tom Yum Goong (স্পাইসি থাই সীফুড স্যুপ), Pad Thai (থাই ফ্রাইড নুডলস), ইত্যাদি সহ ব্যাংককের জনপ্রিয় সব খাবারই পেয়ে যাবেন এখানে।


    ৬/ চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেট


    বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক বাজার বসে চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেটে। প্রতি সপ্তাহে ২,০০,০০০ মানুষ কেনাকাটা করতে আসে ১৫,০০০ স্টল বিশিষ্ট এই মার্কেটে। ব্যাংকক গেলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন এই মার্কেট থেকে। মার্কেটটি খোলা থাকে শুক্র, শনি আর রবিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিস থেকে শুরু করে পরিধানের জিনিস-- সব পাবেন এখানে তাও আবার সুলভ মূল্যে। কিন্তু প্রচুর দামাদামি করতে হবে।


    ৭/ থাই ম্যাসাজ 


    ব্যাংকক যাবেন আর বিখ্যাত থাই ম্যাসাজ নিবেন না? বিশ্বখ্যাত থাই ম্যাসাজের আঁতুড়ঘর থাইল্যান্ড। তাই এখানে পাবেন বিশ্বের সেরা ম্যাসাজ যা আপনার শরীর ও মনকে ফুরফুরে করে দিবে। ব্যাংককের অলিতে গলিতে অসংখ্য থাই ম্যাসাজ পার্লার রয়েছে। দেখেশুনে একটিতে ঢুকে পড়ুন আর উপভোগ করুন থাই ম্যাসাজ। এই ম্যাসাজের বিশেষত্ব হচ্ছে শরীরের যেকোন স্থানের দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা দূর করে, স্ট্রেস রিলিফ করে এবং আপনার মনে প্রশান্তির সৃষ্টি করে।


    কিভাবে ব্যাংকক যাবেন?


    ব্যাংকক যেতে হলে প্রথমে আপনাকে থাইল্যান্ডের ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করতে হবে। থাইল্যান্ড ভিসা ২০২২ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন Thai Embassy Bangladesh এ। ভিসা প্রসেসিং সার্ভিস পেতে আমাদের কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন


    থাই এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, স্পাইসজেট, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্স, ও ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ফ্লাইট যাচ্ছে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে। ঢাকা টু ব্যাংকক বিমান ভাড়া ২০২২ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন flightexpert.com। কমপক্ষে তিন মাস আগে টিকেট কাটলে ভাড়া অনেক কমে পাবেন।


    সরাসরি ফ্লাইটে ব্যাংকক পৌঁছাতে প্রায় আড়াই ঘন্টার মতো লাগে। কমপক্ষে ৪-৫ দিন হাতে রেখে ব্যাংকক ঘুরতে যাওয়া উচিৎ। 



    ব্যাংককে গিয়ে কোথায় থাকবেন?


    কম খরচে ব্যাংকক থাকতে চাইলে সবচেয়ে ভালো উপায় রিজনেবল প্রাইসের হোটেল ও রিসোর্টগুলো। রিজনেবল প্রাইসে লাক্সারি প্রাইভেট রিসোর্টে থাকতে চাইলে ওল্ড টাউনের চিল্যাক্স রিসোর্ট ট্রাই করত পারেন। সুসজ্জিত বেডরুমের ভেতর জাকুজ্জির সুবিধা সহ এই রিসোর্টটিতে এক রাত থাকতে ৩-৪ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এছাড়া ব্যাংককে বেশ কিছু এফর্ডেবল হোটেল রয়েছে যেগুলোতে ভাড়া খুব বেশি নয়। তেমন কিছু হোটেলের নামঃ


    Bangkok City Hotel

    Rambttri Village Inn and Plaza

    Mandarin Hotel Bangkok

    Phranakorn-Nornlen Hotel

    Siri Sathorn Bangkok by UHG


    ব্যাংকক ভ্রমণ খরচঃ ব্যাংকক যেতে কত টাকা লাগে?


    ব্যাংকক ঘুরতে যাওয়ার আগে সব মিলিয়ে কত টাকা লাগতে পারে সে ব্যপারে ধারণা থাকা জরুরি। ব্যাংকক ভ্রমণ খরচ নিম্নরুপঃ


    রিটার্ন বিমান ভাড়া - জনপ্রতি ১০,০০০- ১৫,০০০ টাকা (৩ মাস আগে টিকেট কাটলে) 

    হোটেল রুম ভাড়া - প্রতি রাত ৩,০০০-৪,০০০ টাকা 

    সিম কার্ড - ৫০০ টাকা

    খাবার - দিন প্রতি ১,৫০০ টাকা

    মন্দিরগুলোতে প্রবেশ ফি - ২,০০০ টাকা


    সুতরাং, সব মিলিয়ে ব্যাংকক ভ্রমণে আপনার মোট খরচ হতে পারে ৫০,০০০-৬০,০০০ টাকা। 


    পরিশেষে,


    তো এই ছিলো ব্যাংকক ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত। ঢাকা থেকে ব্যাংকক বিমান ভাড়া সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন flightexpert.com। ভিসা ও হোটেল সম্পর্কিত তথ্যের জন্য কল করুন +৮৮-০৯৬১৭-১১১-৮৮৮ নাম্বারে অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন


    ব্লগটি ভালো লাগলে ও আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ভিজিট করুন আমাদের ব্লগ পেইজটি

    সৈকতের শহর নিয়ে আমাদের অন্যান্য ব্লগঃ

     

    এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর কিছু সৈকতের শহর

    মালদ্বীপ ভ্রমণ গাইডঃ হানিমুনের জন্য সবার প্রিয় গন্তব্য

    বালি ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ

    বাংলাদেশীদের জন্য সিঙ্গাপুর ভ্রমণ গাইড ২০২২


    By Rahat Muna

    Thinker & Designer

    Share This Post :