তুরস্ক ভ্রমণ

ঘুরে আসুন তুরস্কঃ কোথায় যাবেন, কেমন খরচ ও অন্যান্য তথ্য

এশিয়া ও ইউরোপের মাঝামাঝি স্থানে তুরস্ক দেশটি অবস্থিত যা একসময় অটোম্যান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে পড়েছে। পর্বতময় আনাতোলিয়া এশিয়া মাইনর উপদ্বীপের অংশ। তুরস্কের বাকি অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস। এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় অবস্থিত। এখানে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল। তুরস্কে যেতে ভিসার জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত টার্কিশ অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে।


তুরস্ক দূতাবাসের ঠিকানাঃ
বাড়ি নং-৭, রোড নং-২, বারিধারা, ঢাকা-১২১২
ফোন: ৮৮২২১৯৮, ৮৮১৩২৯৭, ৮৮২৩৫৩৬
ওয়েবসাইট- www.dakka.be.mfa.gov.tr


ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টে যদি আপনার পেশা সরকারী চাকুরীজীবি লেখা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে এন,ও,সি করিয়ে রাখতেই হবে। এনওসি মানে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট। চাকুরিজীবি না হলে ছাত্রত্বের সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বাকী কাগজ হালনাগাদ করতে হবে।


বলে রাখা ভালো, টাকা বাঁচাতে চাইলে আগে থেকেই এয়ার টিকিট ও হোটেল বুক করে রাখতে পারেন ফ্লাইট এক্সপার্ট থেকে। এমনিতে তুরস্কে সাধারণ মানের হোটেল প্রতিজনের জন্য দুই থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে পাবেন। আর ফ্লাইটের জন্য বাংলাদেশ থেকে তুরস্কগামী বেশ কিছু ফ্লাইট আছে যার মধ্যে টার্কিশ এয়ারলাইনস অন্যতম। এছাড়া আছে এতিহাদ, এমিরেটস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, জেট এয়ারওয়েজ, মালিন্দ এয়ার, এয়ার ইন্ডিয়া ইত্যাদি। বিমান খরচ আপনি কবে, কখন, কোন ক্যারিয়ারে যাচ্ছেন, তার ওপর প্রধানত নির্ভর করে থাকে। এখানে ভালো মানের হোটেল ও ট্রান্সপোর্টেশনের জন্য বেশ টাকাপয়সা খরচ করতে হবে আপনাকে, তাই যেসব যায়গায় মোটামুটি হাটা দুরত্বে ঘুরতে পারবেন, সেখানে গাড়ি না নেওয়াই ভালো। তবে এখানের মানুষ, আবহাওয়া, স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় যোগ করবে এক নতুন মাত্রা, এটা নিশ্চিত!


তুরস্কে বেশ কিছু সিগনেচার ট্যুরিস্ট স্পট আছে, যেগুলোতে না গেলেই নয়। যেমন-


১। হাজিয়া সোফিয়া    

                                

এটি সম্ভবত তুরস্কের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটক আকর্ষণীয় স্থান এবং বিশ্বের প্রাচীনতম ভবনগুলোর একটি। ষষ্ঠ শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান এই ভবনটি মূলত অর্থডক্স গীর্জা হিসেবে নির্মাণ করেন, যা পরবর্তীকালে মসজিদে রুপান্তর করা হয়। বর্তমানে এটি একটি মিউজিয়াম হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এর অসাধারণ স্থাপত্য এবং বাইজেন্টাইন ও মুসলিম অলংকরণের সাজসজ্জা দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে।


মসজিদে রূপান্তরের পর এর দেয়ালে মার্বেল পাথরে অঙ্কিত যীশু খ্রিস্টের অনেক গুলো ছবি মুছে দিলেও ৫০০ বছর পর স্থাপনাটিকে যাদুঘরে রূপান্তরের পর ছবিগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়। ফলে যীশুখ্রিস্টের ছবিগুলো অনেকটা অস্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে অঙ্কিত দুই ধর্মের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্যই স্থাপনায় নতুন নিয়ম প্রবর্তন হয়। বর্তমানে স্থাপনার মূল অংশ বা হলরুম ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ, সেটি মুসলিম অথবা খ্রিস্টান ধর্ম উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।


। ব্লু মস্ক (সুলতান আহমেদ মস্ক)

হাজিয়া সোফিয়া থেকে হেটেই চলে আসতে পারবেন তুরস্কের আরেকটি মন ভুলানো স্থাপত্য- ব্লু মস্কে। ইস্তাম্বুল শহরের চমৎকার স্থাপত্যশৈলী ও ৬টি মিনারের সুলতান আহমেদ মসজিদ বা নীল মসজিদটি বাইরে থেকেই মুগ্ধতার সৃষ্টি করে। এটি তুরস্কের আরেকটি পর্যটক আকর্ষণের স্থান।


এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৬০৯-১৬১৬ শতকে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠাতার সমাধি রয়েছে। মসজিদের ভেতরের উঁচু সিলিঙে ২০,০০০ বিভিন্ন ধরণের নীল টাইলস লাগানো আছে যার কারণে মসজিদটির নাম নীল মসজিদ হয়েছে।


। ইফেসাস


তুরস্কের জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি ইফেসাস যা সেলকাকের নিকট অবস্থিত। ইস্তানবুল বা আনকারা, যেখানেই থাকেন না কেন, আপনার লোকেশন থেকে এটি বেশ দূরে। তাই সরাসরি ফ্লাই করে আসাই ভালো। বিশ্বের সেরা গ্রীক ও রোমান ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ এখানে সংরক্ষিত আছে। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি এই ইফেসাস শহরটি যা একসময় আর্টেমিসের মন্দিরের জন্য বিখ্যাত ছিল। মন্দিরটি অসাধারণ স্থাপত্য শিল্পের জন্য সবার সুনাম কেড়ে নেয়। ইফেসাসের কিছু আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে লাইব্রেরী অফ সেলসিয়াস এবং ট্যাম্পল অফ হেড্রিয়ান এবং প্রাচীন থিয়েটার।


এখানে আরো রয়েছে প্রাচীন মন্দির আর্টেমিসের মন্দির, পাহাড়ের ওপর ঈসা বে মসজিদ, অটোমান এস্টেট, গ্রান্ড দুর্গ, ভার্জিন মেরির ভবন, আরো অনেক পুরনো ঐতিহাসিক ভবন।

 

দেখে নিতে পারেন এ চমৎকার ভিডিও টি, যা আপনার তুরস্ক ভ্রমণের ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে দিবে।


। কাপাদ্দোসিয়া


মোসেন সময়কালে ভলকানোর অগ্ন্যোৎপাতে জন্ম নেওয়া প্রাকৃতিক শিলা এবং অনন্য ঐতিহাসিক শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত। এই ভূগর্ভস্থ শহরটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে বেশ আগেই। কাপাদ্দোসিয়ায় সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণ হলো বেলুন ট্যুর। বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আরো দামী বেলুনও আছে। তবে সবগুলোতেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কম বেশি একই। খরচ যা-ই হোক, ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট ওপরে এক-দেড় ঘন্টার জন্য ভেসে বেড়াতে এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে কে না ভালোবাসবে?


এছাড়াও তুরস্কের আরো কিছু আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে – নমরুদের পাহাড়, ট্রয়, বোদ্রাম ক্যাসেল, পামুকালে, পাতারা বীচ, এস্পেন্ডোস থিয়েটার, অলোডেনিজ, বেসিলিকা সিস্টারন ইত্যাদি।


আপনার তুরস্ক ভ্রমণ শুভ হোক!

By Rahat Muna

Thinker & Designer

Share This Post :